আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা জেলাতে উন্নত পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মানকচুর আবাদ শুরু হয়েছে। খরচ কম ও ঝুঁকিমুক্ত এ মানকচুর আবাদ কৃষকদের মাঝে সাড়া ও জাগিয়েছে। তাই দিন দিন জেলাতে মান কচুর আবাদ বাড়ছে। জেলা কৃষি খামার বাড়ির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করায় এবছর জেলাতে ২২৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে মান কচুর আবাদ হয়েছে।
অল্প পুঁজিতে ভালো মুনাফা অর্জন হওয়ায় জেলাতে কচু চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ফলে কচু চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত ও স্থাপন করছে অনেকে। জানা যায় সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, তালা, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও শ্যামনগর উপজেলার সহ সব ইউনিয়নে কম বেশি কচু চাষ হয়। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি কচুর চাষ করে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া কচু চাষের জন্য উপযোগী। তাই এবছর কচুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছে চাষীরা।
এবছর জেলাতে মোট ২২৫ হেক্টও জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে মান কচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ৬০ হেক্টর জমিতে, কলারোয়াতে ৫০ হেক্টর জমিতে,তালাতে ৭০ হেক্টর জমিতে, দেবহাটায় ১০ হেক্টর জমিতে, কালিগঞ্জে ২০ হেক্টর জমিতে, আশাশুনিতে ১০ হেক্টর জমিতে ও শ্যামনগরে ৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিাক ভাবে মান কচুর আবাদ হয়েছে।
মান কচু একটি সুস্বাধু ও উপাদেয় তরকারি। এক সময় গ্রামে গঞ্জের বাড়ি ঘরের আঙ্গিনায় প্রচুর মান কচুর আবাদ হত। রান্না বান্নার কাজে চুলার ছাই বাড়ি ঘরের আশে পাশে স্তুপ করে রেখে সেখানে মান কচুর চারা রোপণ করা হত। চুলার ছাই মান কচুর আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। কিন্তু বর্তমানে গ্রাম গঞ্জে সেই মান কচুর চাষ ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে মান কচু আটটি রোগের প্রতিশেধক হিসেবে কাজ করে। শরীরে ব্যথা,শরীরে দুর্বলতা, পেটের সমস্যা,আমাশা হলে ,কান দিয়ে রক্ত ঝরলে,বিছা বা বিষাক্ত কোনো পোকা-মাকড় কামড়ালে, যে কোনো বাতের ব্যথায় ,কোষ্ট-কাঠিন্য দেখা দিলে কচু গুড়া, দুধ, চিনি মিশিয়ে বার্লির মতো রান্না করে গরম গরম খেলে পায়খানা পরিষ্কার হয় এবং শরীরে শক্তি পাওয়া যায়।
পাটকেলঘাটার খলিষখালি গ্রামের কচু চাষি মোঃ জাহিদ মোড়ল জানান, এবছর তিনি ৫০ মতক জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে মান কচুর চাষ করেছেন। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল তিনি কৃষি খামার বাড়ির পরামর্শে মান কচুর আবাদ শুরু করেন। তিনি আরো জানান,একটু কষ্ট করলেই কচু চাষ ভাল হয়। তিনি বলেন সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে উপজেলায় কচু চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলার সর্বত্রই কচু চাষ ভাল হয়। যার প্রেক্ষিতে এবছরও কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তা নিলে চাষিরা আরও লাভবান হবে । তিনি আরো জানান, একবিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬শ চারা লাগানো যাবে। আবাদটি একটু দীর্ঘ মেয়াদী হলেও খরচ খুবই কম। রোগ বালাইও নেই। তাছাড়া গরু-ছাগলেও খায় না। বিঘা প্রতি লেবারসহ সার ও সেচ খরচ বাবদ ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এক বছরের একটু বেশি সময় রাখতে পারলে প্রতিটা গাছ থেকে সর্বনিম্ন ৬ কেজি এবং সর্বোচ্চ ১০ কেজি পর্যন্ত মানকচু পাওয়া যেতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, জেলার মাটি ও আবহাওয়া মান কচুর জন্য সহায়ক। মান কচু একটি উন্নত মানের সবজ। সারা বছরই মানকচুর চাষ হয়। চাষীরা দামও ভাল পায়। তাই চাষীদের কথা ভেবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে মান কচু চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কৃষি মেলায় মান কচু চাষের উপর বিমেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। –