ক্রাইমবার্তা র্রিপোট:২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত- সরকারের এহেন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বিএনপি বলেছে, বিচার বিভাগকে দিয়ে এখন সরকার নিজেদের ইচ্ছাপূরণের অপচেষ্টায় রত। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বন্দি থাকার সময়ে ওই মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেখানে কোথাও তারেক রহমান বা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি কিংবা তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করেননি। দিস ইজ টু বি নোটেড। গত কয়েকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যের প্রেেিত গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রকৃতপে বর্তমান সরকার গোটা বিষয়টাকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বলেই দলীয় একজন নেতাকে (আবদুল কাহার আখন্দ) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে মামলার অন্যতম আসামিকে (মুফতি হান্নান) দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে হান্নান সরকার ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে। এখন তারা (সরকার) বিচার বিভাগকে দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ইচ্ছা পূরণের অপচেষ্টায় রত হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং জাতীয় রাজনীতিতে এর বিষময় পরিণতি সম্পর্কে পুনরায় ভাবার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি। : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্যায়ভাবে মিথ্যা অভিযোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড দিয়ে সরকার জনগণকে ুব্ধ করেছে। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেশে জনগণের মধ্যে দারুণ ােভের সৃষ্টি করবে যা কারো জন্যে প্রত্যাশিত নয়। আমরা মনে করি, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান দেশের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজনীয়। নতুন সংকট সৃষ্টির পরিবর্তে সরকারের উচিত বিদ্যমান সমস্যাদি সমাধানের উদ্দেশ্যে ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া। : তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা এবং তার ফলে মিসেস আইভি রহমানসহ অনেক নারী-পুরুষের জীবন নাশ ও আহত হওয়ার নৃশংস ঘটনার আমরা তখনও নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং এখনো জানাই। আমরা এই ঘটনার জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। কারণ আমরাও চাই, এমন নির্মম অরাজনৈতিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। কিন্তু ওই ঘটনাকে পুঁঁজি করে সরকার ও সরকারি দল যেভাবে বিএনপি ও বিএনপির মূল নেতাদের অন্যায়ভাবে বিপদাপন্ন করার জন্য তাদের পুলিশ, গোয়েন্দা, তদন্ত কর্মকর্তা এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নগ্ন প্রয়াস চালাচ্ছে তা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পরপরই তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আইনগত পদপেসমূহ, সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার এবং আওয়ামী লীগ মতায় আসার পর মামলার গতি পরিবর্তনের বিষয়গুলো তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগের নির্ধারিত সমাবেশ মুক্তাঙ্গন থেকে পরিবর্তন করে পুলিশকে না জানিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে কেনো দলীয় কার্যালয়ে সামনে নেয়া হলো? বিএনপি সরকারের সময়ে ইন্টারপোল, এফবিআই ও অন্যান্য তদন্তকারী কর্তৃপ শেখ হাসিনাকে বহনকারী গুলিবিদ্ধ গাড়িটি আলামত হিসেবে পরীা করতে চাইলে কেনো শেখ হাসিনা তাতে অসম্মতি জানান? সদ্য প্রয়াত ভারতীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারকে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জড়িত। এই খবর ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক ডন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শেখ হাসিনা কিসের ভিত্তিতে এমন অভিযোগ করেছিলেন তা কখনো কোনো আদালত কিংবা তদন্তকারী তাকে জিজ্ঞাসা করেনি কেনো? শেখ হাসিনার নিরাপত্তা কর্মকর্তাগণ বলেছেন, তাকে বহনকারী গাড়িতে কয়েকটি বুলেটে ছোড়া হয়েছে এবং তা গাড়ির কাঁচ ও চাকায় আঘাত করেছে। অথচ কোনো তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে গ্রেনেড হামলা ছাড়া গুলি ছোড়ার কোনো কথারই উল্লেখ নেই কেনো? কে বা কারা গুলি ছুড়েছে তাও কি এই ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। এই মামলায় শেখ হাসিনা ২ নম্বর উইটনেস সাী ছিলেন। সি ওয়াজ এ উইটনেস অব দি কেইস, বাট সি ডিডনট টার্ন আপ ইন দি কোর্ট। তিনি কোর্টে আসেননি। প্রথম সাী ছিলেন বাদী এসআই শরীফ আহমেদ। তারপর শেখ হাসিনা। কারণ মূল সাী তো তিনিই। সেই সাী কিন্তু আদালতে আসেন নাই। কেনো? ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বন্দি থাকার সময়ে ওই মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ১৬১ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন সেখানে কোথাও তারেক রহমান বা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি কিংবা তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে বলে দাবি করেননি। দিস ইজ টু বি নোটেড। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। মুফতি হান্নানের সাথে তারেক রহমানের যোগসাজশ থাকলে বিএনপি সরকারের আমলে তাকে (মুফতি হান্নান) গ্রেফতার করা হবে কেনো? মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয় ২০০৭ সালে। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় হয় ২০১১ সালে। অর্থাৎ প্রায় চার বছর পর। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সাথে সাাৎ হয়েছে কিনা এটা কারো মনে করার জন্যে চার বছর সময় লাগে? কবে তাদের সাাৎ হয়েছে এটা মুফতি হান্নান মনে করতে পারেননি। আসলে কোনো একটা তারিখ বললে তারেক রহমানের কর্মসূচি দিয়ে প্রমাণ করা যেতো সেদিন তিনি আদৌও ঢাকায় ছিলেন কিনা? এজন্য তারিখটা উল্লেখ নেই। মুফতি হান্নান তার প্রথম স্বীকারোক্তিতে শেখ হাসিনাকে হত্যার কারণ হিসেবে আবদুস সালাম পিন্টুর (তৎকালীন শিা উপমন্ত্রী) ােভ ও ইসলামিক স্কলারদের হত্যার জন্য তার নিজের ক্রোধকে কারণ হিসেবে বললেও দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিতে তা বদলে গেছে। বলা হয়েছে যে, তারেক রহমান শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন। জবানবন্দির এই পরিবর্তন যে তার ইচ্ছাকৃত ছিলো না সেটা তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে স্বীকার করেছেন। মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গেলে তার প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দির গুরুত্ব কী? দেশের প্রচলিত আইন ও মহামান্য হাইকোর্টের বিভিন্ন রায়ে এটা স্বীকৃত যে, কোনো আসামির দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিই আইনের চোখে গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য। তারেক রহমানকে জড়িত করার জন্য মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় অত্যাচারের নজির কোনো সভ্য দেশে আছে কি? : সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে ইন্টারপোল, এফবিআইকে দেশে নিয়ে আসা, মুফতি হান্নানসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেফতার, সিআইডি, ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা, হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ নানা পদপে তুলে ধরে চার দলীয় জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল বলেন, এসব কিছু প্রমাণ করে যে, প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের শনাক্ত করার বিষয়ে তৎকালীন বিএনপির সরকারের আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার অভাব ছিলো না। : তিনি বলেন, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা মামলার পঞ্চম তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবির চার্জশিট দেন ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট। ২২ জনকে অভিযুক্ত করা হলেও সেই তালিকায় তারেক রহমানের নাম ছিলো না। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর আদালতে অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। এতে ৬১ জন সাীর জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর গোটা ঘটনা এক অস্বাভাবিক মোড় নেয়। চার্জশিটে জিয়া পরিবারের কারো নাম না থাকায় সরকার চলমান সেই বিচার কাজ বন্ধ করে মামলা পরিচালনার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আখন্দকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। ট্রাইব্যুনাল ২ মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিলে অনুমতি দিলেও ২ বছর তারেক রহমানসহ আরো ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। এই অভিযোগের ভিত্তি ছিলো ৪০০ দিন রিমান্ডে নিয়ে আদায় করার মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মইনুল ইসলাম খান শান্ত, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ। : : :
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …