নিজের চেষ্টায় টার্কি পালন করে সফলতার মুখ দেখেছেন ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার নতুন বান্দুরা এলাকার আবু সাঈদ টুটুল। আবু সাঈদকে এ অঞ্চলের একজন আদর্শ টার্কি খামারি বললে ভুল হবে না। টার্কির ডিম ও গোশত সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও ভবিষ্যতে টার্কি আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, টার্কির ডিম ও গোশত অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
১০ বছর আগে সখের বশে রাজধানীর কাঁটাবন এলাকা থেকে ১ জোড়া টার্কি কিনে আনেন আবু সাঈদ। সেই সময়ে কয়েক ধরনের পোষা পাখি ছিল তার শখের তালিকায়। একটা সময়ে তিনি মনে মনে চিন্তা করেন শখের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে টার্কি পালন করলে কেমন হয়। আর সেই ভাবনার জায়গা থেকে শুরু করেন টার্কি পালন। ২০১৪ সালে শুরুর দিকে তিন মাস বয়সী কয়েকটি টার্কি দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। দিন দিন উন্নতির দিকে ধাপিত হচ্ছে তার খামার। তিনটি টিনের শেডে লালনপালন করছেন টার্কিগুলো। সঠিক লালনপালনের মাধ্যমে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে খামারের টার্কিগুলো। বান্দুরা এগ্রো নামের খামারটিতে ছোট বড় মিলিয়ে দেড় শতাধিক টার্কি রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা আর সময়মতো প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করায় রোগ ব্যাধিমুক্ত রয়েছে এই খামারের টার্কি। বর্তমানে তার খামারে সব মিলিয়ে প্রায় সাত লাখ টাকার টার্কি রয়েছে। টার্কি ছয় মাস বয়সে ডিম পারতে শুরু করে আর সাধারণত চার বছর পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। বছরে সর্বোচ্চ ২০০টি ডিম দেয়। তবে ডিম ও এক দিনের বাচ্চার দামও ভালো পাওয়া যায় বলে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন এই খামারি।
বর্তমানে এক হালি ডিমের দাম ৪ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর ১৫ দিন বয়সী একটি টার্কির বাচ্চার দাম ৩ শ’ থেকে থেকে ৪ শ’ টাকা। আবু সাঈদের খামারে রয়েছে নানা জাতের টার্কি। কোনোটার রঙ কালো, কোনোটা সাদা, কোনোটা সাদা-কালোর মিশেল। একটি টার্কির বাচ্চা ঠিকমতো পালন করলে এক বছরেই ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয় বলে জানান তিনি। আর একটি টার্কির সর্বোচ্চ ১৭ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়, যা একটি মাঝারি গড়নের ছাগলের সমান।
প্রতিদিন একটি টার্কি খাবার খায় গড়ে মাত্র ১৫০ গ্রাম। টার্র্কির জন্য আলাদা কোনো খাবার তৈরি হয়নি বলে পোলট্রির লেয়ার খাবারই খাওয়ানো হচ্ছে। দানাদার খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ঘাসও টার্কির পছন্দ। তাই দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস কুচিকুচি করে কেটে খাওয়ানো হয়। খামার দেখাশোনার জন্য রয়েছেন একজন শ্রমিক। এলাকার অনেকেই বান্দুরা এগ্রোর সফলতা দেখে টার্কি পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে টার্কি পালনে আগ্রহীরা এই খামার থেকে ডিম ও বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
আবু সাঈদ জানান, বর্তমানে টার্কির বাজার দর, পালন পদ্ধতি সবই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেগুলোয় সহজে জানা যায়। আমিও আমার খামারের ডিম ও বাচ্চা অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছি।
দেশে এখনো টার্কির বড় বাণিজ্যিক হ্যাচারি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে ছোট আকারে গড়ে তুলছেন ইনকিবিউটর; যা চাহিদার তুলনায় একেবারে নগণ্য। আবু সাঈদও তাদের মধ্যে একজন।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জাকির হোসেন বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতে সব খামারিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকি। কেউ যদি ঋণ নিতে চায় তাদেরকেও আমরা সহযোগিতার করি।
Check Also
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম
মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে …