দারুল ইহসানের সনদের বৈধতার আদেশ জারির পরদিনই বাতিল

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃবিতর্কিত ও আদালতের আদেশে বন্ধ ঘোষিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতার আদেশ একদিনেই স্থগিত করা হয়েছে।মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা ওই আদেশ জারি করে। এই ঘটনা প্রকাশের পর খোদ মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এমনকি বুধবারও ‘টক অব দ্য এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট’ ছিল ওই আদেশ। বিষয়টি টের পাওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন আদেশটি স্থগিতের নির্দেশ দেন।

সচিব মো. সোহরাব হোসাইন  বলেন, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় আদালতের আদেশে বন্ধ করেছি আমরা। এ সংক্রান্ত রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। তার মধ্যে সনদের বিষয়টিও আছে। তাই সনদের বৈধতা নির্দেশনাটি রায়ের পর্যবেক্ষণের আলোকে হয়েছে কি না- সেটি আরও যাচাই-বাছাই করা দরকার। এ জন্য প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে। সে জন্য আদেশটি বাতিল না করে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি/ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং ওই সনদের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর গ্রহণ করবে।’

মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয় নির্দেশিত ‘এমপিওভুক্ত-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম’র আদেশের মধ্যে নতুন এমপিও দেয়া, পদোন্নতি বা উচ্চতর স্কেল দেয়া, বদলির পর এমপিওভুক্ত করা এমনকি বরখাস্তকৃতদের ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে হু হু করে এমপিও খাতে সরকারি ব্যয় বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বন্ধ হলেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বিক্রিও বেড়ে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশির একটি অংশ দারুলের সনদের বৈধতা দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে। মাউশির একজন সাবেক উপপরিচালক (বর্তমানে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক) এক্ষেত্রে বুদ্ধিদাতার ভূমিকায় ছিল। তার দেখানো পথে মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে অতি উৎসাহী হয়ে বৈধতার দেয়ার কাজটি করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এর অংশ হিসেবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে কোন তারিখ থেকে বৈধতা দেয়া যায় তা উল্লেখ করে বাড়তি চাপও সৃষ্টি করে। তবে ইউজিসি এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মতামত দেয়নি বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশের ব্যাপারে এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে হতাশা প্রকাশ করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তবে রাতে স্থগিতের আদেশ শোনার পর বলেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই, সেটির সনদের বৈধতা দেয়া মানেই এর বাণিজ্য রমরমা করে তোলা। আর দুঃখজনক হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই এই আদেশ জারি করে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিকদের শক্তভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। তিনি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শিক্ষাসচিবকে ধন্যবাদ জানান।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।