ক্রাইমবার্তা র্রিপো সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার দায়ে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতে বলেছেন, ‘আমরা জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনকে মিয়ানমারে ঢুকতে দিইনি। তাই মানবাধিকার পরিষদের দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের সুপারিশ গ্রহণ করতে পারছি না।’ খবর বিবিসির।
গত সোমবার রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এটি প্রথম প্রতিক্রিয়া।
হতে আরো বলেন, মিয়ানমার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বরদাস্ত করে না।
জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমার-বিষয়ক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশনের সোমবারের ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল গণহত্যা। এ জন্য মিয়ানমারের সেনারা সেখানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
রাখাইনে মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ ছয় জেনারেলের বিচারের সুপারিশ করেছে জাতিসঙ্ঘ।
সোমবার জেনেভায় জাতিসংঘের দফতরে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
অবশ্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত এক বছর ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ করে অন্তত ৮৭৫ জন রোহিঙ্গার সাথে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তথ্যানুসন্ধান মিশন প্রতিবেদনটি তৈরি করে। প্রতিবেদন তৈরিতে তারা ভিডিও ফুটেজ, স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করেছে।
২০১৬ সালের অক্টোবর আর ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবের পর এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীকে গণহত্যার অভিযোগে কাঠগড়ায় নিতে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীর রাশ টানতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ব্যর্থ হয়েছেন, সেটাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
রাখাইনে ২০১৬ সালের অক্টোবরে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদ ওই তথ্যানুসন্ধানী মিশন গঠন করে। ইন্দোনেশিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মারজুকি দারুসমানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং শিশু ও সশস্ত্র সংঘাতবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের সাবেক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের রাধিকা কুমারাস্বামী ও অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার পরামর্শক ক্রিস্টেফার সিডোটি।
প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সদস্যরা বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সফর করেছেন। রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র, ভিডিও, ছবি ও স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, গবেষক আর কূটনীতিকদের সঙ্গে অন্তত আড়াই শ বৈঠক করেছেন। কারো কারো লিখিত বক্তব্য নিয়েছেন। কারো কারো সঙ্গে কথা বলেছেন টেলিফোনে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু চৌকিতে সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তাণ্ডব। প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয় বাংলাদেশে। নির্বিচারে গ্রাম পোড়ানো, হত্যা আর ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন তারা।
কক্সবাজারে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ঢলের পর থেকে এসেছে ৭ লাখ ২ হাজার। আর ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরের কয়েক মাসে এসেছিল ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যরা আগে থেকেই অবস্থান করছে বাংলাদেশে।