ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় ব্যাপক হারে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী আটকের অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারি পরওয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বিএনপি ও জামায়াতের বেশির ভাগ নেতা কর্মী রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। এছাড়া শহর বন্ধর হাট বাজার সহ যে কোন স্থান থেকে বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী আটকের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বন্ধুক যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে অর্থ বাণিজ্যেও অভিযোগ রয়েছে। ভুক্ত ভোগীদের দাবী মিডিয়ার কাছে অর্থবাণিজ্যের কথা প্রকাশ করলে ক্রয়ফায়ারের ভয় দেখানো হচ্ছে। সম্প্রতি কলারোয়াতে আটকের পর টাকার বিনিময়ে কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসানকে অর্ধশতাধিীক মামলার আসামী করা হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতের বেশির ভাগ নেতা কর্মীও নামে মামলার পাহাড়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পযন্ত সাতক্ষীরা জেলার আটটি থানার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৪২ জন নেতা কর্মীসহ ১১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ১০টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৪২ জন জেলা,উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যয়ের নেতাকর্মী সহ ১১০ জনকে আটক করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতদের মধ্যে,সাতক্ষীরা সদর থানা থেকে ১৫ জন,কলারোয়া থানা থেকে ২০ জন,তালা থানা থেকে ১৪ জন,কালিগঞ্জ থানা থেকে ১০ জন,শ্যামনগর থানা থেকে ১৭ জন,আশাশুনি থানা থেকে ১২ জন,দেবহাটা থানা থেকে ১১ জন ও পাটকেলঘাটা থানা থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক আজম খান জানান,আটককৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
এদিকে কলারোয়াতে বোমার সরাঞ্জমসহ বিএনপি জামায়াতের ১৫ নেতাকর্মী আটকের দাবী করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটকদের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৪০/৫০জনের নামে একটি মামলা হয়েছে। যার নং- ২১/২৮২, তারিখ- ২৮ আগস্ট, ২০১৮; জি আর নং-২৮২/১৮, তারিখ- ২৮ আগস্ট, ২০১৮। ধারা- ৩/৬ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন; তৎসহ ১৫(৩)/২৫-উ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন।
থানা সূত্রে জানাযায়, ২৮ আগস্ট মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলার কয়লা হাইস্কুলের বারান্দায় নাশকতার পরিকল্পনার করছিলো। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মারুফ আহম্মদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ওই নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ককটেল নিক্ষেপ করে পালানোর চেষ্টাকালে পুলিশ সেখান থেকে ১৫ জনকে আটক করে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বিষ্ফোরিত ককটেল বোমার অংশ বিশেষ, ৬টি লাল রঙের কসটেপ টুকরা, ৫টি কাচের খন্ড, ৬টি লোহার জালের কাটি, ৪টি জর্দার কৌটার অংশ বিশেষ, দুই হাত লম্বা বিশিষ্ট ৭টি বাঁশের লাঠি, ৫পিস প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙ্গা টুকরা, ৩টি আধা পোড়া টায়ার উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের দাবী।
আটককৃতরা হলো,জালালাবাদ গ্রামের মৃত-মোজাহার গাজীর ছেলে দাউদ আলী (৫৫), একড়া গ্রামের আফজার আলী মোড়লের ছেলে জাহাাঙ্গীর হোসেন (৩৫), ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত আক্কাস সরদারের ছেলে কুরবান আলী (৫০), খোর্দ্দ-বাটরা গ্রামের আতিয়ার গাজীর ছেলে কামরুল (৩০), কয়লা গ্রামের মৃত তারিব গাজীর ছেলে আব্দুল জলিল (৫০), বাঘাডাঙ্গা গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে শাহাজাহান আলী (৪৫), দক্ষিণ মুরারীকাটি গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে জায়নাল শাহাজী (৩৮), লোহাকুড়া গ্রামের এরশাদ আলী সরদার বাবুর ছেলে শাহাজাহান হাজী (৪০), রামভদ্রপুর গ্রামের মৃত আলহাজ্ব মহিউদ্দীন আনছারীর ছেলে হেলাল আনছারী (৫০), দেয়াড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে জিয়াউর রহমান শেখ (৩৮), ওফাপুর গ্রামের আমিন উদ্দীন মোড়লের ছেলে ওজিয়ার রহমান (৪৭), একই গ্রামের মৃত জয়নাল সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৬৫), একই গ্রামের মৃত শেখ সিরাজুলের ছেলে মনিরুজ্জামান (৪৫), একই গ্রামের নিজাম উদ্দীন শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৭) এবং কেরালকাতা গ্রামের মৃত ইফাতুল্যার ছেলে আব্দুল গফ্ফার (৫৫)।
আটককৃত ব্যক্তরি পরিবারের কয়েক জনের সাথে কথা হয়,তারা জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে পুলিশ নাশকতার মামলা দিয়েছে। উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের নেতারা জানান, আগামিতে প্রহশনের নির্বাচন করতে বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় নেতা কর্মীদের আটক করেছ পুইলশ।
একই দিনে আশাশুনিতে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীদের নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কমপক্ষে ৬০ জন পালিয়ে গেছে। এব্যাপারে থানায় নাশকতা মামলা রুজু করা হয়েছে দাবী পুলিশের।
পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) বিপ্লব কুমার দেবনাথ জানান, সোমবার রাতে উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের গোদাড়া গ্রামে গোদাড়া আল মাদানি দাখিল মাদরাসার নীচ তলায় জামায়াতে ইসলামি ও বিএনপি নেতাকর্মীরা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে ওসির নির্দেশনা মত এসআই নয়ন চৌধুরী, হাসানুজ্জামান, মঞ্জুরুল ইসলাম, প্রদীপ কুমার, পিএসআই আঃ রাজ্জাক, এএসআই আলমগীর, কবির হোসেন ও সরজিৎ কুমার পরিকল্পনা সভায় অভিযান চালান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলেও জামাতের রোকন শোভনালী গ্রামের মৃত আঃ জব্বার গাইনের পুত্র কফিল উদ্দিন গাইন (৬৪), শোভনালী ৯নং ওয়ার্ড জামাতের সভাপতি বৈকরঝুটি গ্রামের জালাল উদ্দিন সরদারের পুত্র আহসান হাবিব (৪২), কুল্যা ইউনিয়ন বিএনপি সেক্রেটারী গুনাকরকাটি গ্রামের আজিবার রহমান গাজীর পুত্র ইউপি সদস্য ইব্রাহিম গাজী ও শোভনালী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খলিসানী গ্রামের ছবেদ আলি গাইনের পুত্র তাহমিদ গাইনকে (৪৫) গ্রেফতার করেন।
আটককৃত সদস্যদের পরিবারের দাবী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে আটক করে পুলিশ।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান জানান, তার নামে ৫৪টি রাজনৈতিক মামলা । ছোট ভাই করাগারে। মা অসুস্থ। বাড়িতে থাকতে পারি না। আদালতে হাজিরা দিতে গেলেও পুলিশ হয়রানি করে। তিনি জানান,মঙ্গলবার সাতক্ষীরা কোটে হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ আদালত চত্তর থেকে আটকের চেষ্টা করে। পরে আমি মটর সাইকেল রেখে চলে আসি। পুলিশ আমাকে ধরতে না পেরে আমার মটর সাইকেলটি নিয়ে যায়। যদি আদালতেও হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে যাব কোথায়। এমন অবস্থা জেলা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের।
কোট পুলিশ বলছে তার নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্টও আছে। তবে আদালত থেকে তাকে আটকরে চেষ্টা করা হয়নি।