যশোরে সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল হত্যার ২০ বছর পার; আর বিচার চায় না সাংবাদিকরা

যশোর ব্যুরো: দুই দশকেও যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকান্ডের বিচার পায়নি তার পরিবার, স্বজনসহ সাংবাদিকরা। এই দীর্ঘ সময়ে নানা জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতায় আটকে গেছে এ মামলার বিচারকাজ। যদিও দ্রুতই প্রতিবন্ধকতা দূর করে মামলা সচল করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু। তিনি জানিয়েছেন, শিগগিরই এ মামলার আরগুমেন্ট শুরু হবে। এরপরই রায়ের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হবে।
এ অবস্থার মধ্যদিয়ে প্রয়াত সাংবাদিক মুকুলের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলো। তার বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যশোরের সাংবাদিক সমাজ বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করেছে। সকালে প্রেসক্লাব যশোর চত্বর থেকে শোক র‌্যালী বের করে সাংবাদিকরা। র‌্যালী সহকারে শহরের চার খাম্বার মোড়স্থ শহিদের স্মৃতি স্তম্ভে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান তারা। সেখানে প্রেসক্লাব যশোর কর্তৃপক্ষ, যশোর সংবাদপত্র পরিষদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিষ্ট এ্যাসোসিয়েশন, দৈনিক গ্রামের কাগজ, স্পন্দন, অনির্বান সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন। পরে প্রেসক্লাব কনফারেন্স রুমে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল করে প্রেসক্লাব। সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফকির শওকত, একরাম-উদ-দ্দৌলা ও বর্তমান সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন। আলোচনা সভা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন যশোর জজকোর্টের সাবেক পেশ ইমাম মুক্তার আলী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রেসক্লাব যশোরের সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান। এরপর সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর (জেইউজে) প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে একই ইস্যুতে পৃথক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এখানে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি নূর ইসলাম। বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম স্বপন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক এম. আইউব, লেখক ও গবেষক বেনজীন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান, সাইফুর রহমান সাইফ, সাংবাদিক নেতা সরোয়ার হোসেন ও আকরামুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক তরিকুল ইসলাম তারেক। বক্তব্যে সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা আজ আর মুকুল হত্যার বিচারের দাবি করবো না। কারণ তাকে হত্যার বিচার না হওয়ায় পরবর্তীতে খুনিরা আস্কারা পেয়ে আরো সাংবাদিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আর এভাবে সাংবাদিকদের লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। পরে শহিদের মাগফেরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন কারো নাম উল্লেখ না করে কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেন।
পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এক পর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে যায়। আর এ কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ থেকে মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন দুইজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (৩) এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (২) ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জ গঠন করা হয়। এ সময় মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে আরেক আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে।
আদালত সূত্র জানায়, মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামি ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোটের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। পরে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে ফের বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম পিটু জানান, মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই বিচার পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। #

Check Also

প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর : আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।