আমাকে সে অবহেলা করে

  স্টাফ রিপোর্টার :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ঠিক এ সময় এসে নিজের জীবন নিয়ে এতটা ভেঙে পড়ব ভাবতে পারিনি। আমাদের সম্পর্ক চার বছরের। এখন আমি একাই সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যাচ্ছি। আগে সে এমন ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমাকে সে অবহেলা করে, খারাপ ব্যবহার করে, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বাজে কথা বলে।

কিছুদিন আগে সে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছিল। সম্পর্কের কথা জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল, তার সঙ্গে ওই মেয়ের আর কোনো যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি, এখনো তাদের যোগাযোগ আছে। কারও সঙ্গে এসব নিয়ে কথাও বলতে পারছি না। বন্ধুরাও প্রায় সবাই আমার বিশ্বাস ভেঙেছে। নিজের মধ্য কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি। পড়ালেখা করতে পারছি না। আমার পরিবারের কাছে আমি সবকিছু বলতেও পারি না। এমনকি আমি ভয়ে আমার বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারি না।

নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলাম, সে স্বপ্নটা হয়তো পূরণ করতে পারব না।

নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

মনে হচ্ছে বর্তমানে তুমি খুব একা হয়ে গেছ। বন্ধুদের কাছ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছ। কারণ, তাদের কাউকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছ না। পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের প্রতি তোমার বিশ্বাসের জায়গাটি তৈরি করতে মনে হয় ব্যর্থ হয়েছেন। বিশেষ করে বাবাকে যে তুমি এতটাই ভয় পাও, সেটি তোমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলার কথা।

পিতামাতার ইচ্ছে পূরণের জন্য সন্তানদের পৃথিবীতে আনা হয়। তাই তাদের ওপরই দায়িত্ব থাকে সন্তানের মধ্যে আস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে। সন্তানেরা যেন বাবা-মাকে একই সঙ্গে শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর প্রথম কয়েকটি বছর পর্যন্ত শিশুর বাবা-মা যদি তাকে একটি নিরাপত্তাবোধের আচ্ছাদনে আবৃত করে রাখতে পারেন, তাহলে সে বড় হয়ে তার সংকটময় মুহূর্তে তাঁদের ছায়ায় আস্থা খুঁজবে। সন্তানের দুঃখকষ্টের সময় তার বাবা-মা সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসেবে তাদের সাহস ও শক্তি জোগাবেন সেটিই কাম্য।

তুমি এই কঠিন সময়ে পরিবারের কারও কোলে মাথা রেখে কাঁদতে পারছ না, সেটি দুঃখজনক। যে ছেলের সঙ্গে তোমার আবেগীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, সে-ও এখন তোমাকে অসম্মান ও অবহেলা করছে। শুধু তা-ই নয়, সে তোমার সঙ্গে এখন মিথ্যাচার ও প্রতারণা করছে। তুমি যেহেতু তাকে এরপরও ছেড়ে চলে যাচ্ছ না, তাই সে তোমাকে অবমূল্যায়ন করেই যাচ্ছে।

তুমি নিজের কাছে প্রশ্ন করে দেখতে পার, আর কত দিন এভাবে ছেলেটির দুর্ব্যবহার সইতে পারবে। ওর সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্কটি তোমাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে, নাকি ওকে বাদ দিয়ে জীবনে চলাটা বেশি কষ্ট, সেটি তোমাকেই হিসাব করে বের করতে হবে।

তুমি লিখেছ, একাই তোমাকে সম্পর্কটি চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ধরনের সম্পর্কে কিন্তু দুজনকেই সমান প্রচেষ্টা চালাতে হয়, যাতে করে সম্পর্কটি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ছেলেটি যদি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অনীহার জায়গায় বিচরণ করতে থাকে, তাহলে তোমার কষ্টের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার কথা।

ছেলেটির সঙ্গে তুমি যদি ঠান্ডা মাথায় এ ব্যাপারে আলোচনা করতে পার, তাহলে ভালো হয়। সেটি সম্ভব না হলে তাকে বড় করে একটি চিঠি লিখে তোমার মনের বর্তমান অবস্থাটি তুলে ধর। ছেলেটিকে কোনো রকম দোষারোপ না করে তুমি নিজের অনুভূতিগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত কর, কেমন? তোমার জীবনে আবার কিছু নতুন উপাদান যোগ করতে পার, অর্থাৎ কিছু নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা কর। নিজের ব্যক্তিগত সীমারেখাটি যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেভাবে কিছু বন্ধুবান্ধব তোমার জীবনে থাকা খুব প্রয়োজন।

আশা করছি, তুমি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

Check Also

১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে; ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।