ক্রাইমবার্তা র্রিপোট : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সময়মতো চিকিৎসক না আসায় ক্লিনিকে সিজার করাতে বাধ্য হচ্ছে প্রসূতিরা।
গর্ভে পানি ভাঙ্গা অবস্থায় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সন্তান প্রসব করতে আসেন রোক্সানা খাতুন (২০)। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে নিয়ম অনুযায়ী লেবার (প্রসূতি) ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। তিনি যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার মামুন হোসেনের স্ত্রী। স্বজনরা তাকে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে সেবিকা ও ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের সেবার ও অন্তরিগতার কোন অভাব ছিলনা। কিন্তু অভাব ছিলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের। রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার কারনে সেবিকা ও ইন্টার্ণী চিকিৎসক একাধিক বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে খরব দিলেও কোন চিকিৎসক হাসপাতালে আসেননি। শেষ মেষ রাত সাড়ে আটটার দিকে রোগীর গর্ভে পানি না থাকায় বাচ্চার অবস্থা বিপন্ন বুঝে সহকারি রেজিষ্টার মুক্তা দ্রুত রোগীকে অপারেশন টেবিলে নেন। অপরাশনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন কিন্তু চিকিৎসক না আসার কারনে শেষ পর্যন্ত অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে জরুরি মুহুর্তে সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা তাকে শহরের একটি বে-সরকারি ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
শুধু রোক্সানা খাতুন না তার মত কুলসুম (২০) তিনি সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের রাজার স্ত্রী। যশোর নওয়াপাড়া রাধানগর গ্রামের আল মাহমুদের স্ত্রী জেসমিন(২৪)। সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনের স্ত্রী করুনা (২৮) এবং শহরতলী ঝুমঝুমপুর আবাসিক এলাকার ইযাকুব আলীর স্ত্রী শারমিন(২২) হাসপাতালে সেবা না পেয়ে শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র ব্যবসায়িক মানুষিকতার কারনে চিকিৎসকরা হাসপাতালের রোগীদের প্রতি এমন আচারন করে থাকেন। পরবর্তীতে এই রোগীদের শনিবার হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের রেজিষ্টার খাতায় পালাতক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোক্সানা খাতুনের স্বজন আকলিমা ও স্বামী মামুন অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগের দিন তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তখন গাইনী ইউনিট-২ এর চিকিৎসক ইলা মন্ডল তাদেরকে ঈদের পরে হাসপাতালে এসে সিজার করার পরমর্শ দেন। চিকিৎসকের কথামত তারা ঈদের আগের দিন বাড়িতে চলে যান। পরে ডেলিভারির নিধারিত তারিক অতিক্রম করায় গর্ভের পানি ভাঙ্গতে শুরু করে। তখন শুক্রবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু ভর্তির পর থেকে ওয়ার্ডে সেবিকা ও ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা অন্তরিগতার সহিত সেবার দেন। কিন্তু রোগীর অবস্থায় খারাপ থাকায় ওয়ার্ডের সেবিকা ও ইন্টার্ণী চিকিৎসকরা একাধিক বার ইউনিট ২ এর বিশেসজ্ঞ চিকিৎসকদের কল করে বিষয়টি জানালেও কোন চিকিৎসক চোখের দেখা দেখার জন্য হাসপাতালে আসেননি। পরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসক মুক্ত রাউন্ডে আসলে রোগীর অবস্থায় খারাপ দেখে অপারেশনের জন্য রোগীর স্বজনদের ওষুধ আনতে বলেন। স্বজনরা ওষুধ আনলে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়। কিন্তু ডা. ইলা মন্ডল হাসপাতালে আসেননি অপারেশন করতে। এমন কি তার ইউনিটের অন্য চিকিৎসকরাও হাসপাতালে আসেননি।
বিষয়টি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদকে জানালেও গাইনী ইউনিটের কোন চিকিৎসক হাসপাতালে আসেননি। ফলে রোগী ও বাচ্চার জীবন বাঁচাতে স্বজনরা রোগীকে শহরের রোটারি হেলথ ক্লিনিকে নিয়ে যান। তার মত সেবা না পেয়ে অন্য অনেক রোগীরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চলেযান।
খোজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের গাইনী ইউনিট ২ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইলা মন্ডল, ডা. প্রকাশ চন্দ্র মুজুমদার, ডা. কানিজ ফাতেমা, ডা. ফাহানা শবনমসহ ৯জন চিকিৎসক থাকলেও শুক্রবার কোন চিকিৎসক হাসপাতালে যাননি। ফলে রোগীরা উপযুক্ত সেবা না পেয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ওয়ার্ডের কর্মরত সেবিকা শাহানাজ জানান, রোগী আসার সাথে সাথে চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
এ ব্যাপারে ডা. ইলা মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে রাতে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসককে খবর দেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় অপর চিকিৎসক ওহেদুজ্জামান ডিটুকে খবর দেন। তিনি আসতে একটু দেরি হওয়ার কারণে অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তবে সকাল থেকে রোগী না দেখার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি