ক্রাইমবার্তা র্রিপোট :
সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জোরদার লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবের বিষয়ে কিছুই নেই বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা
শুক্রবার নেপালের কাঠমুন্ডুতে ১৮ দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুদিনের বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন, যাতে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশ অংশ নিয়েছে।
কাঠমুন্ডু সম্মেলনের ঘোষণায় নেতারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদে উৎসাহ, সমর্থন ও অর্থায়নের জন্য জোটভুক্ত দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
কিন্তু মিয়ানমারে রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন অভিযানের’ মুখে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর কোনো উল্লেখ নেই সেই ঘোষণায়।
সদ্য সমাপ্ত চতুর্থ সম্মেলনে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এসব দেশের নেতারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ সেতু হিসেবে বিমসটেকের বিশেষ অবস্থানকে গতিশীল করে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পর্যায় উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
টেকনাফের হাড়িয়াখালী থেকে শরণার্থী শিবিরেরর উদ্দেশে দলে দলে ছুটছেন রোহিঙ্গারা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান
সেইসঙ্গে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সংহত ও গভীরতর করার বিষয়ে পূর্ণ প্রতিশ্রুতিশীল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে ঘোষণায়।পাকিস্তান সদস্য না থাকায় অনেকের কাছেই সার্কের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই জোটকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার উন্নয়নে কার্যকরী মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যৌথ ঘোষণায় তার উল্লেখ রয়েছে।
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেকের সদস্যের মধ্যে নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডও রয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনার ফলে ইসলামাবাদে ২০১৬ সালের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি এই জোট বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, দারিদ্র বিমোচন এবং কৃষি বিষয়ক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনস্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতাসহ ১৪টি সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে উন্নয়ে এই জোটের প্রাধান্য রয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে সন্ত্রাস প্রতিরোধ প্রাধান্য পাওয়ায় সদস্য দেশগুলোর নিরাপত্তা প্রধানরা নিয়মিত বৈঠক করছেন। থাইল্যান্ডে আগামী বছর মার্চে এর পরবর্তী বৈঠক বসবে।
বিশ্ব দরবারে বহুল আলোচিত চলমান এই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ইঙ্গিত দিলেও তা হয়নি।
এই বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে থাকলে তা এই অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা সংকট তৈরি করবে বলে অনেকে মনে করলেও কাঠমান্ডু ঘোষণায় বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট এই সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলন শেষে শুক্রবারই দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সম্মেলনে নেতারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জোরদার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে লড়াইয়ের সমন্বিত পদ্ধতি খুঁজে বের করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন।
বিমসটেকভুক্ত দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান। যে কেনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে যে-ই দায়ী হোক না কেন এবিষয়ে কাউকে কেনোভাবে ছাড় না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে ঘোষণায়।
নেতারা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের লক্ষ্যবস্তু শুধুমাত্র সন্ত্রাসী ব্যক্তি ও সংগঠন এবং চক্র নয়, বরং যেসব রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্র সংগঠন তাদের মদত দেয় বা তাদের গুনকীর্তন করে, তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
এই ক্ষেত্রে জোটভুক্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ, সন্ত্রাসীদের লোকবল বৃদ্ধি ও আন্তঃসীমান্ত চলাচল বন্ধ করা, উগ্রপন্থায় দীক্ষা দমন, সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা।
আঞ্চলিক কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমসটেক সচিবালয়ের কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে এই ঘোষণায়।
বিমসটেকের বর্তমান চেয়ার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি অলি শর্মা সমাপনী বক্তব্য দিয়ে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।