রোহিঙ্গা সংকটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ে ভুয়া ছবি ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপত্র মিন্দানাও ডেইলিতে সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই ভুলের জন্য পাঠক ও ওই ছবি দুটির আলোকচিত্রীদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। দুটি ছবি ‘ভুলভাবে’ প্রকাশ করা হয়েছে বলেও জানায় সেনাবাহিনী।
‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী : প্রথম পর্ব’ নামে ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইটি গত জুলাইয়ে প্রকাশিত হয়। যেখানে অন্য দেশের পুরনো দুটি ছবি ব্যবহার করে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল।
আরেকটি ছবির ক্যাপশনে দেয়া হয় ভুয়া তথ্য। ইংরেজি ও বর্মী ভাষায় বইটি প্রকাশ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রচার শাখা ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার’। বইটিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভুয়া ছবি ছেপে দেয়ার বিষয়টি ফাঁস করে শুক্রবার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স বলছে, ওই বইতে যে আটটি ছবির মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, তার মধ্যে তিনটি ছবি তাদের পরীক্ষায় ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ছবিগুলোর বিষয়ে রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি। এর মধ্যে পুরনো সাদা-কালো একটি ঝাপসা ছবিতে দেখা যায়, এক লোক কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দুই লাশের পাশে।
ক্যাপশনে বলা হয়েছে- ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’। ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে ওই বইয়ে ১৯৪০ এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে। ছবির বিবরণে বর্মী ভাষায় বোঝানো হয়েছে- রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ হত্যার ছবি।
বইটিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের মুসলিম রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করেছে ‘বাঙালি অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে। অথচ খোঁজ করতে গিয়ে রয়টার্স দেখতে পায়, ওই ছবি আসলে তোলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, যখন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
ঝাপসা হয়ে আসা আরেকটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ গাট্টি বোঁচকা নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে কোথাও যাচ্ছে। এ ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মিয়ানমারের দক্ষিণ অংশ দখল করে নেয়ার পর বাঙালিরা এ দেশে প্রবেশ করে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোঝাতে চেয়েছে, ওই ছবি ১৯৪৮ সালের আগের, মিয়ানমারের কোনো এলাকার। কিন্তু রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডায় তোলা একটি রঙিন ছবিকে বিকৃত করেই সেনাবাহিনীর বইয়ের ওই ছবি ছাপা হয়েছে।
সাদা-কালো আরেকটি ছবিতে দেখা যায় বেহাল চেহারার একটি নৌকা বোঝাই মানুষ। তাতে ক্যাপশন- সাগরপথে মিয়ানমারে ঢুকছে বাঙালিরা। আসলে ওই ছবিটি তোলা হয় ২০১৫ সালে ইয়াঙ্গুনে।
ওই সময় লাখ লাখ মানুষ নৌকায় করে সাগরপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বহনকারী এরকমই একটি নৌকা সে সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। আসল ছবিটি উল্টে দিয়ে সেটি সাদা-কালো আর ঝাপসা করে ব্যবহার করা হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে।
প্রথম দুটি ছবির বিষয়ে ইঙ্গিত করে মিন্দানাও ডেইলিতে প্রকাশিত বিবৃতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলেছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুটো ছবি ভুলভাবে ওই বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তবে তৃতীয় ছবিতে ক্যাপশনে ভুল তথ্য দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।