ক্রাইমবার্তা র্রিপোট: নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নিত্যনতুন ঘটনা ঘটছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে গড়ে উঠছে একাধিক রাজনৈতিক নতুন মোর্চা। যদিও বিভিন্ন মহলে আশঙ্কাও রয়েছে যে শেষ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কি না। এ দিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠুভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলীয় জোটের অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। গত শনিবার বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগম ঘটে। এ বিশাল জনসভার পর দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে তৃণমূলের পক্ষে জোরালো চাপও রয়েছে। ফলে উপযুক্ত সময়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এরই মধ্যে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত সোমবার লন্ডনে এক সভায় ভাষণ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন বলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ডাক আসা মাত্রই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। কোনো কিছুতে বিভ্রান্ত না হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বক্তব্য রেখেছেন তারেক রহমান। পূর্ব লন্ডনের হাইস্ট্রিট নর্থের দি রয়্যাল রিজোন্স হোটেলে এ আলোচনা সভা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদের একতরফাভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে সরকারবিরোধী অন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া ২০ দলীয় জোট এবং পেশাজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনকে রাজপথে নামানো হবে। সেই সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি মোকবেলায় করণীয় ঠিক করছে বিএনপির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লন্ডনের জনসভায় তারেক রহমানের দেয়া বক্তব্য বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেশে-বিদেশে দলটির হাজারো নেতাকর্মী দেখেছেন এবং শুনেছেন। আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে তার বক্তব্যের পর নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনাও তৈরি হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা তার সেই বার্তাটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ছড়িয়ে দেবেন। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে যে কর্মসূচি আসবে তা যেকোনো মূল্যে সফল করতে তৃণমূলে বার্তা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিগগির দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হবে।
এ দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত হবে না। রাজপথের আন্দোলনই এক্ষেত্রে একমাত্র পথ। আপনারা রাজপথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হোন। এক দিকে নির্বাচন আর অন্য দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন হবে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচনে যাবো।
দলটির সিনিয়র নেতারা আলাপকালে জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন হবে। পেশাজীবীরাও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাজপথে থাকবেন। তাদের এবার মাঠে নামাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জাতীয় ঐক্যের ব্যানারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহারের কর্মসূচি পালন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এতে জোটের শরিকেরাও থাকবে। গত ২৯ আগস্ট গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক সংগঠনের নেতা এবং পেশাজীবী নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। ওই বৈঠকে শিক্ষক নেতাদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য পেশাজীবীদের সাথেও মতবিনিময় করবে বিএনপি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা এবং শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পেশাজীবী হিসেবে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হওয়া এর মূল উদ্দেশ্য।
এ দিকে অভিন্ন কর্মসূচি দেয়ার লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক আহ্বান করা হবে। বিএনপির পাশাপাশি জোটের পক্ষ থেকেও নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে জোটের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করবেন। ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে লক্ষাধিক পোস্টার ছাপানো হয়েছে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে, যা সারা দেশে লাগানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি আসবে। বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে পোস্টার ছাপানো হয়েছে। সেগুলো সারা দেশে টাঙানো হবে। পাশাপাশি অভিন্ন কর্মসূচিও আসতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা কর্মসূচির মধ্যেই আছি। শনিবার দলের বিশাল জনসভা হয়েছে। এখন সরকার পতনের মহালগ্ন উপস্থিত হয়েছে। আর কোনো উপায় নেই তাদের ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। তিনি বলেন, রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে দাপট থাকলেও তার চেহারায় ছিল অন্যমনস্কতা ও দুশ্চিন্তার ছাপ। সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের গণদাবি উপেক্ষা করে, তাহলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন রিজভী।