২১ আগস্ট মামলা :তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে: কূটনীতিকদের বিএনপি

ক্রাইমবার্তা র্রিপোট:১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা সম্পর্কে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের অবহিত করেছে বিএনপি। এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে বলে জানান নেতারা।

এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় করাগারে আদালত বসানোর সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেও কূটনীতিকদের জানানো হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের এ বৈঠক হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড, জাপান, কানাডা, নরওয়ে, ফ্রান্স, তুরস্ক, মিয়ানমার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২৪টি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকের শুরুতে তিন পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

এছাড়া এ মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি ও তথ্য-উপাত্ত দলের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সরবরাহ করা হয়। বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২১ আগস্ট নৃশংস ঘটনাকে পুঁজি করে বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল ষড়যন্ত্র করছে।

এর জন্য তারা পুলিশ, গোয়েন্দা, তদন্ত কর্মকর্তা, এমনকি বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান সরকার গোটা বিষয়টিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

এজন্য এ মামলায় দলীয় একজন নেতাকে (আবদুল কাহার আখন্দ) তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামির (মুফতি হান্নান) স্বীকারোক্তি জোর করে আদায় করা হয়েছে। সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে মামলার আসামি মুফতি হান্নান সরকারের ষড়যন্ত্র ফাঁসও করে দিয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আইভি রহমানসহ অনেক নারী-পুরুষের মৃত্যু এবং আহত হন। এ ঘটনায় বিএনপি তখন নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এখনও জানায়।

এ ঘটনার জন্য দায়ী অপরাধীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা। যাতে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পরপরই তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার আইনগত পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই মামলার গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করে। এ বিষয়গুলো তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

বিএনপি নেতারা আরও জানান, ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বন্দি থাকার সময় এই মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ১৬১ ধারায় তিনি জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

সেখানে কোথাও তারেক রহমান বা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি কিংবা তাদের কোনো সম্পৃক্ততা আছে বলেও তিনি দাবি করেননি। অথচ এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারেক রহমানকে দোষারোপ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। মুফতি হান্নানের সঙ্গে তারেক রহমানের যোগসাজশ থাকলে বিএনপি সরকারের আমলে তাকে গ্রেফতার করা হতো না।

২০০৭ সালে মুফতি হান্নানের প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। সেখানে আবদুল সালাম পিন্টুর (তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী) ক্ষোভ ও নিজের ক্রোধকে কারণ হিসেবে তিনি বলেন।

কিন্তু দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিতে তা বদলে গেছে। এখানে বলা হয়েছে- শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন তারেক রহমান। জবানবন্দির এই পরিবর্তন যে মুফতি হান্নানের ইচ্ছাকৃত ছিল না, সেটা তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে স্বীকার করেছেন। তারেক রহমানকে জড়িত করার জন্য মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় অত্যাচার করা হয়েছে বলেও কূটনীতিকদের জানান বিএনপি নেতারা।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কর্মকর্তার প্রতিবেদনেই তারেক রহমানের নাম আসেনি। কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর গোটা ঘটনা এক অস্বাভাবিক মোড় নেয়। এ মামলার বিচার কাজ বন্ধ করে সরকার অবসরপ্রাপ্ত বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আখন্দকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে।

এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ?বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য কারাগারে আদালত বসানোর সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে দাবি করা হয়েছে। তারা জানান, মূলত খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।