ক্রাইমবার্তা ডেক্স রিপোর্টঃ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার বাসা থেকে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মিরপুর মডেল থানায় দুলাল নামের এক ব্যক্তির দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মিরপুর মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রিয়াজুল ইসলাম জানান, দুলাল নামের এক ব্যক্তি বুধবার মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে , চাঁদাবাজির মামলায় মোজাম্মেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ জন্য তাকে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করা হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’ প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোজাম্মেল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর পর থেকে ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে মোট ২৩৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৫৯ জনের। এ তথ্য তুলে ধরে সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমিয়ে আনতে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়।
আরো পড়ুন: যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য
ঈদযাত্রায় ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত আহত ১২৬৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৩০ জুন ২০১৮
বিগত ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১২৬৫ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪০৫ জন নিহত ও ১২৭৪ জন আহত হয়েছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো: মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮তে এই তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া, সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের কো-অর্ডিনেটর সদরুল হাসান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা ক্রমেই একটি বেপরোয়া ও মরিয়া জাতিতে পরিণত হয়েছি, যা কিছু হয় তা বন্দুকযুদ্ধ দিয়ে সমাধান করে যাচ্ছি। আমরা আইন ঠিকভাবে মানি না। মানতে চেষ্টাও করি না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনারোধে যেসব সুপারিশ করেছেন আশা করা যায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা সঠিকভাবে পালন করবে।
এদিকে সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদ যাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি চার বছর ধরে অত্যন্ত দতা ও বিশ্বস্ততার সাথে পর্যবেণ করে আসছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
এবারের ঈদের আগে যাত্রাপথে সব তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও য়তির পরিমাণ বেড়েছে।
ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ২৩ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১২৬৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছে। রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ ৪১ জন নিহত হন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটর সেল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিক এ প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৮.৮৯ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২.২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩.০৬ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৮.৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫.২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেণে দেখা গেছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন, বিরতিহীন বা বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, অদ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
আর এজন্য জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাসহ প্রশিতি চালক গড়ে তোলা জন্য জাতীয়পর্যায়ে সরকারিভাবে ‘চালক প্রশিণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা এবং নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করাসহ বিভিন্ন সুপািরশ সংগঠনটির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়।