ক্রাইমবার্তা র্রিপোট: নির্বাচনের তারিখ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কথা বলা উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী ঠিক করেননি, উনি ভুল করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেমবোসার সম্মেলন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। অর্থমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা না বলেই নির্বাচনের তারিখ সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন। এটা নিয়ে কথা বলা তার উচিত হয়নি।
বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। আর আগামী ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার হবে ছোট পরিসরে। এ সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে। শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে এ সরকার।
বুধবার ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অব সাউথ এশিয়ার (ফেমবোসা) সম্মেলন শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আরো পড়ুন : ভাইকে প্রার্থী বানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা অর্থমন্ত্রীর
নয়া দিগন্ত অনলাইন ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের লভ্যাংশের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগে বললেও এখন আমি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নিয়েছি। আর নির্বাচন করছি না। নির্বাচন করবে আমার ভাই (জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে আবদুল মোমেন)। আমি তার সমর্থক হয়ে কাজ করব।’ তবে আগামী নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে, সেখানে অর্থমন্ত্রী থাকতে পারেন। তিনি নিজেই বললেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারে সম্ভবত আমি থাকছি।’
এদিকে ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও ২৭ ডিসেম্বর ভোট হতে পারে বলে বুধবার একটি অনুষ্ঠানে যে মন্তব্য করেছেন সেটি অনুমান থেকে করা বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আমি আর নির্বাচন করবো না এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। তবে আমার নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়টিও চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারের ডিভিডেন্ড প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ডিভিডেন্ড প্রদানের ওই অনুষ্ঠানে শেয়ার হোল্ডারদের হাতে ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাবুল সাহা। এসময় ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড হস্তান্তর করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এমডি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ছিল। সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনও বাংলাদেশকে কোটামুক্ত জিএসপি সুবিধা দেয়নি। তবে এরপরেও আমরা এগিয়ে গিয়েছি। গ্রামীণ ব্যাংকও এখন ভালো চলছে। এটা নিয়ে কোনও সমস্যা নাই।
এ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারে আমি হয়তো থাকবো। তবে সেটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী। আমি আর নির্বাচন করছি না এটি মোটামুটি চূড়ান্ত।’
যদি নির্বাচন না করেন তাহলে ওই আসনে কাকে রেখে আসছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মোমেন (এম এ মোমেন)। তার প্রতি আমার আস্থা ও সমর্থন আছে। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি মনোনয়ন বোর্ড এটি চূড়ান্ত করবে। আমি আশা করবো তাকে ওই আসনে মনোনয়ন বোর্ড মনোনীত করবে।’
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি ড. কামাল, বি চৌধুরীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো যে দাবি তুলেছে সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান সাংবাদিকরা। এর জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি ‘অবান্তর, অবাস্তব এবং বোগাস।’ কারণ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছে। সেখানে নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আনফরচুনেটলি একটি বড় দল অংশ নেয়নি। সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু, ওই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তো প্রশ্ন তোলেনি। কাজেই তাদের এ ধরনের প্রস্তাব অবাস্তব এবং অবান্তর।’
নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে ২৫ জানুয়ারি। এর আগেই আরেকটি সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর নতুন সংসদ নির্বাচিত হলে আগের সংসদ অটোমেটিক ভেঙে যায়। তাই সংসদ ভেঙে দেওয়ার কোনও দরকার দেখি না।
বুধবার পৃথক একটি অনুষ্ঠানে আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও ২৭ ডিসেম্বর ভোট হতে পারে বলে যে মন্তব্য তিনি করেছেন সে বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আর্কষণ করে এটা সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যা বলেছি সব অনুমান। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে এটি মোটামুটি চূড়ান্ত।’
তিনি বলেন, আমি গতকাল (বুধবার) নির্বাচনকালীন সরকার ও ভোটের তারিখের বিষয়টি মোটামুটি অনুমান করে বলেছি। নির্বাচনকালীন সরকার তিন মাস আগে হতে হয়। সে হিসেবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে কেউ বলছেন সেপ্টেম্বরের শেষে, কেউ বলছেন অক্টোবরের শুরুতে। ওই সময়টাকে মাথায় রেখে আমার ধারণা আগামী ২০ দিনের মধ্যেই এটা হতে পারে। তবে এটি একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ভোটের তারিখের বিষয়টাও আমার অনুমান। আমার ধারণা অমন একটা তারিখেই নির্বাচন হতে পারে। তবে এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে।