ক্রাইমবার্তা ডেক্স রিপোর্টঃ
• বাংলাদেশি দুই বিজ্ঞানীর সাফল্য।
• স্ট্রবেরিতে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
চিংড়ি মাছের ফেলে দেওয়া খোসা এখন আর বর্জ্য নয়। এই খোসা ব্যবহার করে বাংলাদেশের দুই বিজ্ঞানী স্ট্রবেরির উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান উদ্ভাবন করেছেন। এতে স্ট্রবেরির উৎপাদন ৪৮ শতাংশ বাড়বে।
স্ট্রবেরির সুরক্ষায় উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান উদ্ভাবনের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। গবেষক দলটি ইতিমধ্যে ওই উপাদান স্ট্রবেরির ওপর প্রয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এর ফলে ফলটিতে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব বলে তারা আশা করছে। গবেষণা প্রবন্ধটি গত শুক্রবার অনলাইন বিজ্ঞান সাময়িকী প্লস ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর আন্তর্জাতিক শাখা এই উদ্ভাবনের কার্যকারিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিংড়ির খোলস সাধারণত আমরা ফেলে দিই। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা এই ফেলে দেওয়া অংশটিকে সম্পদে পরিণত করতে পেরেছি। এত দিন স্ট্রবেরিতে বিভিন্ন জীবাণু আক্রমণ দমনে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহৃত হতো। এর ফলে স্ট্রবেরির মান খারাপ হতো। কিন্তু উদ্ভাবিত উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান ব্যবহারের পর দেখা গেছে, উৎপাদিত স্ট্রবেরির খাদ্যমান ভালো হয়েছে। এটি নিরাপদও হয়েছে।
গবেষকেরা বলছেন, চিংড়ির খোলস থেকে তৈরি ওই উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান ব্যবহারের ফলে স্ট্রবেরিতে মানবদেহের জন্য উপকারী উপাদান ফেনলিক ও ভিটামিন সি’র পরিমাণ দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও বেড়েছে, যা মানুষের শরীর সতেজ রাখতে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্ট্রবেরি ছত্রাক ও অণুজীবঘটিত রোগের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। বাংলাদেশের বায়ুতে উচ্চ আর্দ্রতার উপস্থিতি এ ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনুকূল। আর একই জমিতে বারবার স্ট্রবেরি চাষের ফলে রোগবালাই আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের রোগ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষক অনুমোদনহীন নানা ধরনের রাসায়নিক বালাইনাশকের মিশ্রণ তৈরি করে মাঠে ব্যবহার করে, যা সামগ্রিকভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের উদ্ভাবিত উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান দেশের স্ট্রবেরির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি একে সুস্বাদু ও নিরাপদ করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্ট্রবেরির উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ে। ২০১৪-১৫ সালে দেশে ২৮০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি হয় ১ হাজার ৬০০ টন। ২০১৬-১৭ সালে তা কমে ২২১ টন হয়। তবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা আবারও বেড়ে ৫০০ টন হয়েছে।
উৎপাদন বৃদ্ধির পরিমাণ একবার কমে যাওয়া ও বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কৃষিবিদেরা বলছেন, মূলত ছত্রাকসহ নানা ধরনের রোগের কারণে স্ট্রবেরির উৎপাদন কমে আসে। চিংড়ির খোসা থেকে তৈরি উৎপাদন বৃদ্ধিকারক উপাদান ব্যবহারের ফলে স্ট্রবেরি রোগমুক্ত হবে এবং উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।