সাতক্ষীরায় পাটের লোকসান পুষিয়ে যাচ্ছে পাটকাঠিতে# চারকোল মিল স্থাপনের দাবী চাষীদের

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবার্তা রির্পৌট:  সাতক্ষীরা: : সাতক্ষীরায় পাটের লোকসান পুষিয়ে যাচ্ছে পাটকাঠিতে। পাটের দাম নিয়ে যখন চিন্তিত ঠিক সেই সময় সাতক্ষীরার পাট চাষিরা পাটকাঠি নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে। সোনালী আঁশ পাট চাষে লোকসান হলেও পাটকাঠি বিক্রি করে তা পুশিয়ে নিচ্ছে। চাষীদের দাবী সাতক্ষীরা জেলাতে চারকোল তৈরির মিল স্থাপন করতে পারলে এ পণ্যটির উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হবে লক্ষাধীক মানুষের কর্মসংস্থান। উপার্জিত হবে কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব
বর্তমানে দেশে অন্তত ৩০টি চারকোল কারখানা রয়েছে। ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান পাটকাঠি থেকে কয়লা উৎপাদন করছে। জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও গাজীপুর জেলায় এসব কারখানা অবস্থিত। নতুন করে সাতক্ষীরা জেলাতে চারকোল তৈরির মিল স্থাপনের দাবী উঠেছে।
চারকোল তৈরির মিলে পাটকাঠি ব্যবহূত হওয়ায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। পাটের দাম না পাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে কৃষক। একদিকে সোনালী আঁশ, অন্যদিকে রূপালী কাঠি- দু’টো মিলে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পাট চাষে।’
সূত্রে মতে দেশে ২০১২ সালে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। সে বছরই চীনে চারকোল রপ্তানি শুরু হয়। বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে কয়লা উৎপাদিত হচ্ছে। এটি ফেসওয়াশ, ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
পাটকাঠি থেকে কয়লা বা অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে মনে করেন এখাতে সংশ্লিষ্টরা।
পণ্যটির উৎপাদন বাড়লে ভবিষ্যতে জাপান, ব্রাজিল, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কানাডা, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশে এ কয়লা রপ্তানি সম্ভব হবে।
২০১৬ অর্থবছরে এখাত থেকে ১৫০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় হয়েছে। যদিও বর্তমানে কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে।
পাটকাঠি সাধারণত কৃষকের রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজে কিংবা বড়জোর আখের ছোবড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পার্টিকেল বোর্ড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হতো। পাট বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল পাটখড়ি থেকে তৈরি চারকোলের নানা সম্ভাবনার বিষয়ে।
চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার,প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি,মোবাইলের ব্যাটারি, ফেসওয়াশের উপকরণ ও প্রসাধণপণ্য, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়। চারকোল বা কয়লা ছাড়াও পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বন উৎপাদন করা যায়। ইউরোপে ওয়াটার পিউরিফিকেশন প্লান্টে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
এই শিল্পে জড়িত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহির্বিশ্বে প্রতিনিয়তই চারকোলের চাহিদা বাড়ছে। দেশি উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছে এ খাতের প্রতি। সংশ্লিষ্টদের মতে, পাটখড়ি থেকে কার্বন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। একইসঙ্গে উঁকি দিচ্ছে নতুন এক সম্ভাবনার।
পাট অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎ্পাদিত হয়। যার মধ্যে এক লাখ টনের বেশি পাটকাঠি উৎ্পাদিত হয় সাতক্ষীরা জেলাতে।
ক্লিভল্যান্ডভিত্তিক শিল্প বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্র্র্রিডোনিয়া গ্রুপ ইনকরপোরেশনের তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ৮ দশমিক ১ শতাংশ হারে চারকোলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরে বিশ্বে চারকোলের চাহিদা ২১ লাখ মেট্রিকটন। আর ২০২৪ সালে চারকোলের বৈশ্বিক বাজার হবে ১০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশকে এ বাজার ধরতে চলে দেশে চারকোল কারখানা বৃদ্ধি করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৩৭ হাজার ৬২৪ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলার চার হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে ৫৪ হাজার ৬৩৩ বেল, কলারোয়া উপজেলার চার হাজার ০৫ হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার ৬৮ বেল, তালা উপজেলার তিন হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে ৩৩ হাজার ৯২৮ বেল, দেবহাটা উপজেলার ৯০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ১৩ বেল, কালিগঞ্জ উপজেলার ১৭০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৯১৩ বেল, আশাশুনি উপজেলার ৯০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ১৩ বেল ও শ্যামনগর উপজেলার পাঁচ হেক্টর জমিতে ৫৬ বেল পাট উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, সাতক্ষীরায় খুব ভাল মানের পাট উৎপাদন হয়। এবছর পাট উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে । জেলাতে চারকোল তৈরির মিল স্থাপনের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা উদ্যোগ নিলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।