অবশেষে ১২ শিক্ষার্থীকে আদালতে হাজিরের পর রিমান্ডে
ক্রাইমর্বাতা রির্পৌট: ঢাকা: তেজগাঁও ও মহাখালী থেকে আটক যে ১২ শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না তাদের আজ আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। ঢাকার সি.এম.এম আদালতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা পৃথক ২ মামলায় হাজির করে ৭ দিন করে রিমান্ড চায় পুলিশ। আপরদিকে আসামী পক্ষ রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম নুরুন নাহার ইয়াসমিন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন আবেদন নাকচ করে প্রত্যেককে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
যাদের কে রিমান্ড দেয়া হয়েছে তারা হলোঃ তারেক আজিজ, মো. তারেক, জাহাঙ্গীর আলম, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমীন, মো. জহিরুল ইসলাম, মো. বোরহান উদ্দিন, ইফতেখার আলম, মো. মেহেদী হাসান রাজিব, মো. মাহফুজ, মো. সাইফুল্লাহ ও মো. রায়হানুল আবেদিন।
আসামী পক্ষে আইনজীবিরা আদালতে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তাদের আটক করে নেয়া হয়। কিন্তু তারপর তারা কোথায় কিভাবে ছিল
আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন-আইনজীবী মোসলেহ উদ্দিন জসিম, রোকন রেজা, শহিদুল ইসলামসহ বেশ কিছু আইনজীবী।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও বিজি প্রেস এলাকা থেকে ৩১ জনকে তুলে নিয়ে যায়। এক দিন পর ১২ জনকে আটকে রেখে বাকি শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এই আটকের বিষয়ে ডিবি অফিস থেকে শিক্ষার্থীদের পরিবারকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
অবশেষে সেই ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখাল পুলিশ
সোমবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ সময় মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীর তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়া এলাকা থেকে রোববার ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
উপপুলিশ কমিশনার দাবি করে বলেন, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের মনোগ্রামসহ ১২ সেট ইউনিফর্ম, ১৩টি ফিতাসহ আইডি কার্ড (গ্রেফতার ছাত্ররা কেউই ওইসব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী নয়), হ্যান্ডমাইক, ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস, হাতুড়ি, স্ক্রু ড্রাইভার, তিনটি ল্যাপটপ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মপদ্ধতির বিভিন্ন ফর্ম, শিশু-কিশোরদের মাসিক ম্যাগাজিন কিশোর কণ্ঠসহ বিভিন্ন ইসলামি বই, বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে লেখা ডায়েরি ও ফেসবুকে পোস্ট করা বিভিন্ন ভিডিওসহ ছবি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, তারা গত ২৯ আগস্ট শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন উসকানিমূলক লেখা,পোস্ট,ফটো ও ভিডিওর মাধ্যমে গুজব ছড়ায়।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের ইটপাটকেলের আঘাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পিআই আবু হাজ্জাজ, এসআই ইমাম হোসেন, এএসআই আজাদ, এএসআই ইব্রাহিমসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম মূল হোতা তারেক আজিজ ফেসবুক টাইমলাইনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করত।’
গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা হলেন-তারেক আজিজ, তারেক, জাহাঙ্গীর আলম, মো. মোজাহিদুল ইসলাম, মো. আল আমিন, জহিরুল ইসলাম, মো. বোরহান উদ্দিন, ইফতেখার আলম, মেহেদী হাসান রাজিব, মো. মাহফুজ, সাইফুল্লাহ ও রায়হানুল আবেদিন।
মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, তারেক আজিজের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে এবং বাকিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর) ক্যান্টনমেন্ট জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হান্নানুল ইসলাম জানান, রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের সাত দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওইসব ছাত্রের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ১২ জন ছাত্রকে ৪ দিন ধরে অন্যায়ভাবে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ তাদের আটক বা গ্রেফতারের বিষয়টি স্বীকার করা হচ্ছে না। এমনকি তাদের আদালতেও সোপর্দ করা হচ্ছে না।।
অভিভাবকরা দাবি করে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁও-মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমাদের সন্তানসহ অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ডিবি কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়া হলেও আমাদের আরও ১২ সন্তানদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
অভিভাবকরা দাবি করে বলেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে হাজির করা হবে। কিন্তু চারদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা কখনো আশ্বাস দিচ্ছেন, আবার কখনো গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করছেন। যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমাদের সন্তানদের ডিবি কার্যালয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে আমাদের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়।
অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলনের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সংবাদ সম্মেলনে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। ৫ সেপ্টেম্বর বা ৭ সেপ্টেম্বর আমরা কাউকে গ্রেফতার করিনি। যারা পেশাদার অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতারে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। এ ধরনের অভিযান এখনো অব্যাহত আছে।