মিসরে ৭৫ ইখওয়ান নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ—-অ্যামনেস্টি# জামায়াতের উদ্বেগ

পার্সটুডে : মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদ এবং সেনাশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগে ৭৫ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া, যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ছয়শতাধিক ব্যক্তিকে।

কায়রোর তোরা কারাগার প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিশেষ আদালত শনিবার যাদের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে তাদের মধ্যে ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষস্থানীয় নেতা এশাম আল-এরিয়ান, মোহাম্মদ বেলতাগি এবং বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক সাফওয়াত হিগাজিও রয়েছেন। ইখওয়ানের আধ্যাত্মিক নেতা মোহাম্মদ বাদিয়িসহ যাবজ্জীবন ৪৬ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং ৬১২ জনকে পাঁচ থেকে ১৫ বছরের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। সহিংসতা উসকে দেয়া, অবৈধ বিক্ষোভ সংগঠিত করাসহ নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন অভিযোগে তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়।

তবে, কারান্তরীণ থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পাঁচ জনের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি।

অন্যদিকে সাওখান নামে পরিচিত প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক মাহমুদ আবু জেইদকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের আগস্টে কায়রোতে হত্যাকাণ্ডের ছবি তোলার অপরাধে তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়।

এদিকে, গণহারে এভাবে ফাঁসি ও কারাদণ্ড দেয়াকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকার পরিচালক নাদিয়া বোনাইম এই বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কায়রোর রাবেয়া স্কয়ার ও কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাহদা স্কয়ারে বিক্ষোভে অন্তত ৯০০ জনকে হত্যার ঘটনায় একজন পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়নি। এটা বিচারের নামে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।’

অন্যদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, “২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট মিশরের রাবেয়া মসজিদের কাছে বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযানে এক দিনেই ৮০০’র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মুসলিম ব্রাদারহুড-সমর্থিত মোহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে উৎখাতের প্রতিবাদে তার সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছিল। পুলিশ ও সামরিক বাহিনী তখন পরিকল্পিতভাবে জনসমাবেশে গুলি চালিয়েছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নির্দেশে ওই সব সমাবেশে সামরিক হামলা হয়েছিল।”

২০১২ সালের ৩০ জুন মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মোহাম্মদ মুরসি।

সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি ক্ষমতা দখল করেন। এর প্রতিবাদে রাজধানী কায়রোসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হলেও এখন ওই বিক্ষোভ উস্কে দেয়ার অভিযোগে ব্রাদারহুড সংগঠনকে দায়ী করে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়। এ পর্যন্ত এই দলের শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে ব্রাদারহুডকে। আর মুরসির ঠিকানা হয়েছে অন্ধকার কারাগারে। কনডেম সেলে অন্তরীণ মুরসির সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে মাত্র দুইবার তাকে তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

——–0————-

মুসলিম ব্রাদারহুডের ৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় জামায়াতের উদ্বেগ

মিসরের সামরিক জান্তার মিথ্যা সাজানো মামলায় মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ ৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও অন্য সাতশত জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদ এবং সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মিসরের সামরিক জান্তার সাজানো মিথ্যা মামলায় মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন সিনিয়র নেতাসহ ৭৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও অন্য সাতশত জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। গতকাল রোববার দেয়া বিবৃতিতে তারা বলেন, মিসরের নির্বাচিত সরকারকে বেআইনীভাবে উৎখাত করার পর থেকেই সে দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণের উপর চলছে সামরিক জান্তার অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন। বেআইনীভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা ড. মোহাম্মাদ মুরসিকে অন্যায়ভাবে এখনো বন্দী করে রাখা হয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতা মোহাম্মাদ বদিসহ ৪৭ জন নেতাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মিসরের সামরিক জান্তা মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড ও সে দেশের জনগণের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছে। সামরিক জান্তার জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসীর প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।  নেতৃদ্বয় বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে মুসলিম ব্রাদারহুডের সকল নেতা-কর্মীকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা মিসর সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।