ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:সাতক্ষীরা: মায়ের লাশ দেখে পালালো মেয়ে।সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামে নিজের মেয়ের হাতে মমতাময়ী মা মমতাজ বেগম (৫০) নির্মম ভাবে খুন হয়েছে। মেয়ে টুম্পার (২৪) লোহার রডের আঘাতে মা মমতাজ নিহত হয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এদিকে, পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য সোমবার রাত ১১ টার দিকে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর রাতেই বাড়ি থেকে কৌশলে পালিছে মেয়ে টুম্পা খাতুন। তাকে আর এলাকায় দেখা মিলছে না। টুম্পার ব্যবহ্নত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
পুলিশ সোমবার রাতে মমতাজ খাতুনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে নিহতের পরিবারের কাছে মঙ্গলবার বিকালে হস্তান্তর করেছে। আজ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব নিহত মমতাজ বেগমের জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে। নিহত মমতাজ বেগম নগরঘাটা গ্রামের মৃত আব্দুস সবুর সরদারের স্ত্রী। অনেক বছর আগেই তার স্বামী আব্দুস সবুর মারা গেছে।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব জানাজার নামাজ শেষে নিহত মমতাজ বেগমের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। লাশ দাফনের সময়ও একমাত্র মেয়ে টুম্পা খাতুন মায়ের লাশের পাশে ছিল না। দাফনের আগে নিহত মায়ের মরা মুখও দেখলো না পাষান্ড টুম্পা। এনিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
তবে মেয়ে টুম্পা মায়ের লাশ সোমবার রাতে বাড়িতে আনার পর দাবী করেন, তার মা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। সে তার নিকট আত্মীয়স্বজনদের কাছেও একই কথা বলে ফোন করেছিল। কিন্তু পুলিশ তার পরিবারের বরাত দিয়ে বলছে, টিউবওয়েলের পাশে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন মমতাজ বেগম। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। পরস্পর বিরোধী এই বক্তব্যই প্রমান করে এটি একটি হত্যাকান্ড।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, সোমবার রাতে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য মমতাজ খাতুনের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়ে টুম্পা খাতুন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। প্রায় সারাটা দিন হাসপাতালের বারান্দায় মায়ের লাশ পড়ে থাকলেও পাশে একমাত্র মেয়ে টুম্পা খাতুনের দেখা মেলেনি। একমাত্র মাদকাসক্ত ছেলে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি। লাশ যখন পুলিশের কাছ থেকে নিহতের আত্মীয়স্বজন গ্রহন করে তখনও মেয়ে টুম্পা খাতুন পাশে ছিলনা।
পাটকেলঘাটা থানার ওসি ( তদন্ত ) শরিফুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় ভয়েস অব সাতক্ষীরাকে জানান, লাশ হস্তান্তরের সময় নিহতের মেয়ে টুম্পা খাতুনকে দেখা যায়নি। টুম্পার মাদকাসক্ত একমাত্র ভাইও সোমবার রাত থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। বিধায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে মমতাজ খাতুনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। কি ভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে টুম্পা খাতুন এলাকা থেকে পালিয়ে গেল জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান ‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে’।
এদিকে, এই হত্যাকান্ডের ঘটনা থেকে রেহায় পেতে মেয়ে টুম্পা বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ শুরু করেছে বলে জানাগেছে।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুস সবুর সরদার মারা গেছে। নিহতের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে টুম্পা খাতুন সোমবার দুপুরে পারিবারিক কলহের জেরধরে তার মা মমতাজ খাতুন (৫০) কে ঝগড়ার এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে সজোরে মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করে। এতে মমতাজ খাতুন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরার চায়না বাংলা হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু রোগির অবস্থা খারাপ দেখে তারা ভর্তি করতে রাজি হয়নি। পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে টুম্পা প্রচার করতে থাকে, তার মা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। স্থানীয়রা জানতে পেরে পাটকেলঘাটা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মেয়ে টুম্পা (২৪) খাতুনের বিয়ে হয় সাতক্ষীরার সংরক্ষিত আসনের এমপি মিসেস রিফাত আমিনের ছেলে রুমনের সাথে। প্রায় আড়াই বছর আগে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। টুম্পা খাতুন প্রায় তার মাকে মারধর করতো। স্বামাীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে টুম্পা এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উশৃঙ্খল জীবন ছিল তার। তার একমাত্র ভাই শরীফও নেশাগ্রস্ত। টুম্পার একটি ৩ বছর বয়েসের ছেলে রয়েছে।
মেয়ের বেপরোয়া চলাফেরা পছন্দ করতো না তার মা মমতাজ বেগম। সোমবার সকাল ৮ টার দিকে এনিয়ে গন্ডগোলের জেরধরে টুম্পা তার মাকে লোহার রড দিয়ে ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করে । এর পর মা কয়েক বার বমি করে। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর জ্ঞান ফিরেনি। বাড়ির লোকজন তার মা কে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
তারা জানায়, এই হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে নিহতের মেয়ে টুম্পা। মা হত্যার দায় থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ শুরু করছে সে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আগে থেকে টুম্পার রয়েছে ওঠা-বসা। সেই সব রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মা হত্যাকান্ডের এই ঘটনা থেকে এ যাত্রায় বাঁচার চেষ্টা করছে টুম্পা।
পাটকেলঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) মো: শরিফুল ইসলাম জানান, দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে মমতাজ বেগমের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধন্ত গ্রহন করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের দেবর হাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, মমতাজ বেগমের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে, টিউবওয়েল পাশে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
তালা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। লাশের গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান।
##