ডেস্ক: বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়াসহ প্রভাবশালী বেশকিছু দেশে কূটনৈতিক মিশনে ব্যাপক রদবদল আনতে যাচ্ছে ভারত। এর মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে দেওয়া হতে পারে ওয়াশিংটনের দায়িত্বে। সেখানকার রাষ্ট্রদূত নভতেজ সরনার এ বছরের শেষের দিকে অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর শ্রিংলা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিলে ঢাকা আসতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক কাউন্সিলের ঢাকা কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা রিভা গাঙ্গুলি দাস।
ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স হিসেবে বছরে ৪০০ কোটি ডলার ভারতে যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। ভারতের রেমিট্যান্সের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বস্ত্র খাতের একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার এ দাবি করেন। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের এক বক্তব্যের ভুল ভাঙাতে গিয়ে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা প্রবাসী আয় নিয়ে কথা বলেন।
এর আগে শফিউল ইসলাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘ভারতের প্রবাসী আয়ের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। এটা নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি।’
শফিউল ইসলামের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘আমি রেকর্ড রাখার জন্য এফবিসিসিআই সভাপতির বক্তব্যটির আংশিক সংশোধনী দিতে চাই। বাংলাদেশ যে ভারতের রেমিট্যান্সের চতুর্থ উৎস, এটা প্রকাশ করেছিল পিউ রিসার্চ। তাদের ওয়েবসাইটে সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে এ তথ্য উঠেছিল, যা পুরোপুরি ভুল। সংবাদটি মিথ্যা।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তথ্যাদি আমরা এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে আদানপ্রদান করতে পারি। এ দেশে ভারতীয় নাগরিকদের একটি ছোট দল কাজ করে। এটা অবিশ্বাস্য যে তাদের পক্ষে ৪০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠানো সম্ভব।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পিউ রিসার্চের বরাত দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশকে ভারতের রেমিট্যান্স আয়ের পঞ্চম উৎস বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে ৪০৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পায় বলে উল্লেখ করা হয়। গত ২ জুলাই আরেকটি পত্রিকায় বাংলাদেশ থেকে ভারত এক হাজার কোটি ডলার আয় করে বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের বরাত দেওয়া হয়নি।
পিউ রিসার্চ গত ২৩ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে একটি হালনাগাদ ইনফোগ্রাফিকস প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে ২০১৬ সালে ২০০ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স বিদেশে যায় বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ভারতে যায় ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ ক্ষেত্রে ভারতের ওপরে আছে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। পিউ রিসার্চের একই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ৪০৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, মোট ৯টি দেশে কূটনীতিকদের রদবদলের পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, মিয়ানমার, স্পেন ও থাইল্যান্ড। এ পরিবর্তন খুব দ্রুতই
বাস্তবায়ন করা হবে।
খবরে বলা হয়, বর্তমানে মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিসরি। তিনি চীনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বামবাওয়ালে’র স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। বামবাওয়ালে চীনের আগে ভুটান ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই তিনটি দেশই ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, জাপানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুজন চিনয় খুব শিগগিরই অবসরে যাবেন। তবে আগামী অক্টোবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাবেন টোকিও সফরে। সে পর্যন্ত সুজয়কেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়েছে। তিনি অবসরে গেলে তার জায়গায় দায়িত্ব নিতে পারেন অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় ভার্মা।
উল্লেখ্য, হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। তার আগে বাংলাদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পংকজ শরণ। বাংলাদেশে দায়িত্ব শেষে তাকে পাঠানো হয় রাশিয়ায়। সেখান থেকে তাকে এ বছর ভারতের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।