ক্রাইসবার্তা ডেস্করির্পোটঃ সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) “সাভার উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ও ঢাকা জেলা পরিষদ সদস্য সেলিম মণ্ডল তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
বুধবার মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যার কথা স্বাীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন সেলিম মণ্ডল। বিকেলে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দাম্পত্য কলহের জের ধরে গত ২ আগস্ট রাতে সাভারের মজিদপুর এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী আয়েশাকে পিটিয়ে হত্যা করেন সেলিম মণ্ডল। ওই রাতেই আয়েশার লাশ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার স্বরূপপুর এলাকায় এনে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরের দিন ৩ আগস্ট সকালে আগুনে পোড়া লাশটি উদ্ধার করে সিঙ্গাইর থানা পুলিশ। জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে লাশটি মানিকগঞ্জ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওই ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। প্রথমে লাশের পরিচয় না পাওয়ায় মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ১৭ দিন পর ১৯ আগস্ট সকালে নিহতের ভাই বশির উদ্দিন সিঙ্গাইর থানায় এসে মৃতের ছবি দেখে লাশটি তার বোন আয়েশা আক্তারের বলে শনাক্ত করেন। পরে বশির উদ্দিন তাঁর বোন হত্যার অভিযোগে সেলিম মণ্ডলকে প্রধান ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে সিঙ্গাইর থানায় মামলা দায়ের করেন।
সেলিম মণ্ডলকে ধরতে ১৯ আগস্ট বিকেলে তার সাভারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। ওইদিন তাকে না পেয়ে তার ভাই জুয়েল মণ্ডলকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। বর্তমানে তিনি আয়েশা হত্যা মামলায় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে, সেলিম মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ ওঠায় গত ২০ আগস্ট সাভার উপজেলা যুবলীগ সভাপতির পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ।
সিঙ্গাইর থানা পুলিশ জানায়, সেলিম মণ্ডল গত ২৮ আগস্ট স্ত্রী হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন নেন। জামিনে থেকে তিনি ৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইতালি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিবাসন পুলিশ তাকে আটক করে সিঙ্গাইর থানায় হস্তান্তর করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিঙ্গাইর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, স্ত্রী হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকায় সেলিম মণ্ডলকে অন্য একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরই মধ্যে উচ্চ আদালত তার জামিনাদেশ বাতিল করেন।
গত রবিবার স্ত্রী আয়েশা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সেলিম মণ্ডলকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। ৯ আগস্ট পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সেলিম মণ্ডল স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসির আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তিনি স্ত্রী হত্যার দায় স্বাীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
আয়েশা আক্তারের ভাই বশির হোসেন বলেন, বিয়ের পর স্ত্রী আয়েশা আক্তারের সঙ্গে সেলিম মণ্ডলের বনিবনা হচ্ছিল না। গত ২৮ জুলাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর বোন আয়েশা আক্তারের সঙ্গে সেলিম মণ্ডলের কথাকাটাকাটি হয়। সেলিম মণ্ডল তখন আয়েশাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
গত ২ আগস্ট আয়েশাকে হত্যা করেন সেলিম মণ্ডল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্ত্রীর সন্ধান দাবি করে ১৪ আগস্ট সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। গত ৩ আগস্ট আগুনে পোড়া একটি লাশ উদ্ধার করে সিঙ্গাইর থানা পুলিশ। খবর পেয়ে ১৭ দিন পর ১৯ আগস্ট সিঙ্গাইর থানায় গিয়ে মৃতের ছবি দেখে লাশটি তাঁর বোনের বলে নিশ্চিত হন তাঁরা।