টিএসসির সুইমিংপুলে হচ্ছে পাঁচতলা ভবন!

• নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে
• অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ইউজিসিতে প্রস্তাব
• প্রস্তাব পাস হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ
• নতুন ভবন করতে ভাঙা হবে সুইমিংপুল
• বর্তমান ভবনে স্থান সংকুলান হয় না: কর্তৃপক্ষ
• ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা মৌলিকত্ব হারাবে: স্থপতিরা

ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মূল নকশায় পরিবর্তন এনে সেখানে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মূল নকশায় থাকা সুইমিংপুল ভেঙে সেখানে নির্মিত হবে এ ভবন। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনের কক্ষ ছাড়াও এতে থাকবে ভূগর্ভস্থ মিলনায়তন।

স্থপতিরা বলছেন, মূল নকশায় পরিবর্তন করায় টিএসসির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকর্মটি তার মৌলিকত্ব হারাবে। এ ছাড়া ওই জায়গায় থাকা প্রাচীন স্মৃতি মন্দিরগুলোও আড়ালে পড়বে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমান ভবনে স্থান সংকুলান হয় না। তাই নতুন ভবনের প্রয়োজন আছে। এই নতুন ভবনে খরচ করা হবে প্রায় ১৭৪ কোটি টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। ভবন নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি পাস হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

‘ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের জন্য ভূগর্ভস্থ মিলনায়তন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত পাঁচতলা মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ প্রকল্প’টিতে থাকবে ইনডোর গেমস রুম, থিয়েটার, সংগীতকক্ষ, নৃত্যমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া ও টিচার্স লাউঞ্জ। এই ভবনের নিচে ৫৫ ফুট গভীরের ভূগর্ভস্থ মিলনায়তনটি হবে তিন স্তরের। এর ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ১ হাজার ১০০। আর সামনের পায়রা চত্বরের খোলামেলা জায়গায় মাটির ২০ ফুট গভীরের পার্কিং হবে দুই স্তরের।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মূলত বর্তমান ভবন ও মিলনায়তনে স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। অন্য কোথাও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সুইমিংপুলের স্থানটি বেছে নেওয়া হয়েছে।

নতুন ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ভেঙে ফেলা হবে সুইমিংপুল। তবে এই জায়গায় থাকা পুরোনো তিনটি স্মৃতিস্তম্ভকে সংরক্ষণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণ করা হবে আরসিসি পদ্ধতির মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় সিমেন্ট ও কংক্রিট দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ ও এর চারপাশ শক্ত করা হবে, যাতে ভেঙে না যায়।

দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১৯৬১ সালে টিএসসির নকশা করেন বিখ্যাত গ্রিক স্থপতি কনস্তান্তিনোস দোক্সিয়াদিস। নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। তিনি ১৯৭৫ সালে মারা যান। দোক্সিয়াদিসের প্রণয়ন করা নকশাগুলো নিয়ে পড়ানো হয় বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। তার মধ্যে আছে টিএসসির নকশাও। মূল নকশায় পরিবর্তন এনে নতুন ভবন নির্মাণের আলোচনা শুরু হওয়ার সময়ই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বছরের শুরুতে আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি কাজী এম আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার সময়ই তাদের বলেছিলাম টিএসসি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকর্ম। মূল নকশায় পরিবর্তন আনলে এটি তার মৌলিকতা হারাবে। কিন্তু এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা করেনি।’

রিজভী আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে টিএসসির এই রূপ দেখে আসছি। এর সঙ্গেই অভ্যস্ত। একটা নস্টালজিয়াও আছে। নতুন ভবন হলে দেখা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন যেসব শিক্ষার্থী আসবেন, তখন তাঁরা আগের পরিবেশটা আর পাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঐতিহ্য সংরক্ষণের দিকেও নজর দেওয়া উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ মিলনায়তনসহ নতুন ভবনের জন্য নির্বাচিত জায়গায় ভবনের নকশার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওই জায়গার মাটি। আমাদের দেশের মাটি সাধারণত দোআঁশ হওয়ায় পানির স্তর ওপরে চলে আসে। তখন নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এমন আশঙ্কা খুব বেশি নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। তারা পর্যালোচনা করে পাঠাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেক সভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নতুন ভবন হলে সেখানে টিএসসির ছাত্রসংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য কার্যক্রমের পরিসর আরও বাড়বে। বর্তমান টিএসসি নির্মাণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী ছিলেন, বর্তমানে তার কয়েক গুণ বেশি শিক্ষার্থী। সুতরাং পরিসর বড় হওয়া প্রয়োজন। সে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।