ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের বলেন, জনগণের চিকিৎসা সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যেন আন্তর্জাতিকমানের হয়, সেভাবে কাজ করতে হবে। গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের আরও গবেষণার প্রতি জোর দিতে হবে। মানুষের যাতে রোগ না হয় সে ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। আমরা সবধরনের সহযোগিতা করব। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের প্রতি আমি অনুরোধ করব জনগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিজেদের উৎসর্গ করবেন। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করতে তাঁর সরকারের নানামুখী উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য হাসপাতালের কেবিন ব্লকের উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৮৩ একর, বেতার ভবনের ২ দশমিক ৭৬ একর এবং হোটেল শেরাটনের সামনে ২ দশমিক ১৩ একর জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশুদের স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড অটিজম চালু করা হয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদ চালু করেছি। দক্ষ নার্স তৈরির জন্য বিএসসি ইন নার্সিং এবং এমএসএন কোর্স চালু করা হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি বিভাগে বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই অন্যান্য বিভাগগুলোতেও এই সার্ভিস চালু হবে বলে আমি আশা করি। এতে করে দেশের মানুষ কমমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা পেতে সক্ষম হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি বিভাগ চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ হতে এ পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৩৯ জন চিকিৎসককে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক ‘চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড’ প্রবর্তন করেছে। চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, আমাদের চিকিৎসক সমাজ গবেষণা করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে মেডিকেল শিক্ষার নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছিলাম তখন আমি ১০ কোটি টাকা দিয়ে আলাদা একটি ফান্ড করে দিয়েছিলাম। ফান্ডের টাকার ইন্টারেস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এই ফান্ডে আমি আরও ১০ কোটি টাকা দেব। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এ টাকা দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। তাতে আমরা অনেকটা সক্ষম হয়েছি। আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারলে দেশের জনগণকে আরও উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা উপহার দিতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যেন স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ জন্য ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে গরিব মানুষ বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৩০ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশে যাতে আরও বেশি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠে সে জন্য হাসপাতালের ও চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। আমরা চাই চিকিৎসা ব্যবস্থাটা যেন একটা শিল্প হিসেবে গড়ে উঠে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেবে। বাংলাদেশ তখন আর অবহেলা অবজ্ঞার দেশ থাকবে না। সবাই বাংলাদেশকে সম্মান করবে।
বিএসএমএমইউর উত্তর পাশে ৩ দশমিক ৪ একর জায়গায় এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক বিশেষায়িত (সুপার স্পেশালাইজড) হাসপাতালটি। নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
প্রকল্পের আওতায় প্রথম ফেজে দুটি বেজমেন্টসহ ১১ তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরবর্তী দুই তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। ১৩ তলা হাসপাতাল ভবনটিতে থাকবে এক হাজার শয্যা।
বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, নির্মিতব্য এই হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সেন্টার বেইজড হেলথ কেয়ার ডেলিভারি সিস্টেম চালু হবে। হাসপাতালটিতে প্রত্যেকটি সেন্টারের জন্য নির্দিষ্ট বহির্বিভাগ চালু থাকবে। ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টারটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দিতে সক্ষম হবে। এখান থেকে দৈনিক প্রায় ৩-৪ হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা পাবে। এক অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে এ হাসপাতালটি চালু হলে বার্ষিক আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
এ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে। এখানে সব ধরনের গবেষণা উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকবে। যেসব মেডিকেল টেস্টের জন্য বিদেশে যেতে হয়, এটি চালু হলে আর বিদেশে যেতে হবে না। চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও গতিশীল ও উন্নত হবে।