ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ
নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব এওয়াজবালিয়া গ্রামের বেদেপল্লীতে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ২৮ আসামির মধ্যে ২৩ জনকেই চেনেন না বলে দাবি করেছেন মামলার বাদী বেদে সর্দার জাকির হোসেন। পুলিশ মামলায় মনগড়া কিছু আসামি দিয়েছে বলেও অভিযোগ তার। অন্যদিকে বিএনপির দাবি, নির্বাচনকে সামনে রেখে বেদেপল্লীতে আগুনের ঘটনায় তাদের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। বেদেদের দায়ের করা মামলায় ২৮ আসামির মধ্যে বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে জড়ানোর অভিযোগ তাদের।
বেদেদের নির্যাতনে স্থানীয় এক কিশোরের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে গত সোমবার পুরো বেদেপল্লীতে তাণ্ডব চালানো হয়। বেদেপল্লীর অন্তত ৩০টি ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাংচুর ও কুপিয়ে তছনছ করা হয়েছে আরও অন্তত ৫০টি ঘর। হামলার ঘটনায় সুধারাম থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। দগ্ধ যুবক তারেক আজিজের বাবা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে সোমবার সন্ধ্যায় সুধারাম মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অন্যদিকে বেদে সর্দার জাকির হোসেন ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকশ’ ব্যক্তিকে আসামি করে একই থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। বেদে সর্দারের দায়ের করা মামলা নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই বেদেপল্লীতে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। একাধিক বেদে জানান, হামলার সঙ্গে যারা জড়িত বা যাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছে তাদের আসামি করা হয়নি। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা নিজেরাই থানায় উপস্থিত থেকে লোক দেখানো মামলা দায়ের করেছে। এতে দেখা গেছে, অনেক নিরীহ লোককে আসামি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এওয়াজবালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য নুর আলম প্রকাশ আমিন মেম্বার ও ইউনিয়ন
যুবলীগের সভাপতি হেলালকে বেদেরা বরাবরই দায়ী করলেও তাদের মামলার আসামি করা হয়নি। উল্টো পুলিশ হামলাকারী দুই নেতার পরামর্শ অনুযায়ী মামলায় আসামিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরও ওসির রুমে দেখা যায়। দুই পক্ষই ওসির রুমে ছিলাম। এক পর্যায়ে ওসি মামলার কাগজে আমার স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে চলে যেতে বলেন। আমি ওসিকে কিছু আসামির নাম দিয়ে এসেছি। তিনি বলেছেন, তাদের নাম তিনি দিয়ে দেবেন। আমার দেওয়া তালিকা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আমিন মেম্বার ও হেলালের নাম বাদ দিয়ে কয়েকজনের নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন মামলার এজাহারে আরও যাদের নাম দেখা যাচ্ছে তাদের আমি চিনি না।’
এদিকে ২৮ আসামির মধ্যে ২১ জন বিএনপি ও এর সহাযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান। শুক্রবার মাইজদীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেদেপল্লীতে যে নারকীয় তা ব চালানো হয়েছে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই আসামি করা হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উল্টো আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে পুলিশ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে। পুলিশ রাতের আঁধারে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হয়রানি করছে। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- এওয়াজবালিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি আলাউদ্দিন, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা ইউসুপ আলী, ৬নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি শাহজাহান, ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা নাহিদ, ৬নং ওয়ার্ড যুবদল সহ-সভাপতি মোতালেব, ৬নং ওয়ার্ড যুবদল প্রচার সম্পাদক মানিক, ৫নং ওয়ার্ড যুবদল সহসাধারণ সম্পাদক সোহেল, ইউনিয়ন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রতন, ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি রাকিব, ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ফারুক, বিএনপি নেতা মাওলানা মো. নুরুজ্জামান, ৬নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা নুর মোহাম্মদ, ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মাইন উদ্দিন, নোয়াখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক সিরাজ, ৬নং ওয়ার্ড কৃষক দলের সহসভাপতি মন্নান, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, এওয়াজবালিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি লিটন, লুতু, ৬নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছায়েদুল হক, ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সহসভাপতি রুবেল ও ৬নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বাবুল।
বেদেপল্লীর সর্দার কামাল ও মিঠু বলেন, দশ একর জমি দখলের উদ্দেশ্যে বেদেপল্লীতে বারবার হামলা হয়েছে। সোমবার আওয়ামী লীগ নেতা আমিন মেম্বার ও হেলালের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। ২০১৬ সালেও এই দুই নেতা হামলায় জড়িত ছিলেন। ওই সময় সব মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। তাদের নাম আসামির তালিকায় নেই। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৩ জনকেই তারা চেনেন না। বেদেপল্লীর এই দুই সর্দার বলেন, মামলার সময় তারা সুধারাম থানায় উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ অভিযোগ লিখে তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দিয়েছে। তারা বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না, পুলিশ আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবে শুনে থানা ত্যাগ করেছি।’
এ বিষয়ে সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেদেরা সুবিধাবাদী, তারা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত। একেক পক্ষ একেক রকম বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’ বেদেরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে দাবি করে ওসি বলেন, বেদেদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিত দিলে আমরা দেখব।
পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াস শরীফ বলেন, বেদেদের এ অভিযোগ সঠিক নয়। তারা থানায় উপস্থিত হয়ে এজাহারে স্বাক্ষর করে গেছেন। এখন যদি ভিন্ন কথা বলেন তবে সেটি ক্ষতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।