ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন:আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন

ক্রাইমবার্তা র্রিপোট: রাজধানীর বিমান বন্দর এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের সন্ধান চেয়েছে তাদের পরিবার। শনিবার সেগুন বাগিচাস্থ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওই শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাদের সন্তানরা নির্দোষ। আর যদি তাদের কোন দোষ থেকেই থাকে তবে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হোক। কিন্তু এভাবে আটকে রাখার বিষয়টি আইনের লংঘন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, যারা ওই শিক্ষার্থীদেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ বলেই পরিচয় দিয়েছে। বিমান বন্দর এলাকার সিসি ক্যামেরার ছবি দেখলেই বোঝা যাবে তারা কারা। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নবম শ্রেনীতে পড়–য়া একজন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখকৃত তথ্য অনুযায়ী নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলো, টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার বাধাই গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে শাফিউল আলম। যিনি ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী। শাফিউলের ভাই মনিরুল আলম। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী চাপাইনবাবগঞ্জের বালিয়া ডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে মোঃ আবুল হায়াত। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার পশুরিয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে শফিউল্লাহ এবং ডেমরার সারুলিয়া এলাকার পশ্চিম ডগাইরের সাইদুল ইসলামের ছেলে মোশারফ হোসাইন মা’আজ। মা’ আজ নবম শ্রেনীর ছাত্র।বাদ সম্মেলন

সাফিউল আলম ও মনিরুল আলমের মা রমিছা খানম জানান, পবিত্র হজ্জ পালন শেষে ঢাকায় পৌঁছে ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার জন্য সন্তানদের নিয়ে মাইক্রোতে ওঠেন। হঠাৎ একদল অপরিচিত লোক তার দুই ছেলেকে বহু মানুষের সামনে গাড়ি থেকে নামাতে টানা হেঁচড়া শুরু করে। তাৎক্ষণিক তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওরা পরিচয়পত্র ও অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দাবি করে। চোখের সামনে থেকে তার সাথে থাকা ছোট দুই ছেলে শাফিউল আলম ও মনিরুল আলমকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় সঙ্গে থাকা তার ছোট ছেলের বন্ধু আবুল হায়াতকেও তুলে নিয়ে যায়। পরে সে রাতেই আমার ছেলে শাফিউলকে নিয়ে গভীর রাতে তার বাসায় যায় তারা। এসময় বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা শাফিউলের অপর দুই রুমমেট সফিউল্লাহ ও মোশারফ হোসাইন মা’য়াজকেও তুলে নিয়ে যায়। যার মধ্যে মোশারফ হোসাইন মা’য়াজ নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

রমিছা বলেন, গত তিনদিন রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করলেও প্রশাসনের কেউ এ বিষয়ে কিছু স্বীকার করছেন না। এমতাবস্থায় আমাদের সন্তানদের নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমি একজন মা! গত চার দিনে আমার দুই সন্তানের খোঁজ না পেয়ে আমার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। আমার পাশে বসে থাকা মায়েরও একই অবস্থা। সন্তানকে না পেয়ে এই মায়েরাও বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। সন্তানদের খুঁজছেন। ইতিমধ্যে দুজন মা তাদের সন্তানদের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রমিছা বলেন, দয়া করে আমাদের সন্তানদের সন্ধান দিন। দেশের আইনে তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তাদের জন্য আইন আছে। তাদেরকে আদালতে হাজির করে আইনের আওতায় আনুন।

রমিছা বলেন, আপনারাও কোনো না কোনো মা-বাবার সন্তান; কিংবা পিতা-মাতা। আপনারাও সন্তান হারানোর ব্যথা একজন মা কিংবা বাবা হিসেবে অনুধাবন করতে পারেন। আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে বলছি, আমাদের চোখের সামনে থেকে সন্তানদের তুলে নেয়ার ৪ দিন পরও এখনো সন্ধান না দেয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আইন অনুযায়ী আমাদের সন্তানদের সাথে আমাদের দেখা করার সুযোগ থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না, ৪ দিন পরও তাদেরকে আটক না দেখানো দেশের প্রচলিত আইনে বে-আইনি। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশেরও সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। যা অস্বাভাবিক বিষয়। আমারা এখন আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে শঙ্কিত। আমাদের আকুল আবেদন, আমাদের সন্তানকে যেন আমাদের হাতে নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়। তাদেরকে নিয়ে যেন কোন নাটক সাজানো না হয়। আমাদের সন্তানরা যদি সত্যিই কোনো অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।