তামিম ইকবালের ব্যান্ডেজ বেঁধে এত হাতে ব্যাট করতে নেমে পড়া, আর মুশফিকুর রহিমের এলোপাতাড়ি মার…লঙ্কানরা যেন বাংলাদেশের ইনিংসের শেষের ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেনি। ব্যাট হাতে নেমেও এমন খাবি খেয়েছে তারা শেষ পর্যন্ত মুশফিকের রান অর্থাৎ ১৪৪ করতে পারেনি, ২৬২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে অলআউট ১২৪ রানে। দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে বাংলাদেশের।
২৬২ রানের লক্ষ্যটাকে এভারেস্ট উচ্চতায় তুলে দিয়েছে লঙ্কানদের এই কাঁপাকাঁপি। জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজে বল হাতে দিয়েছেন নেতৃত্ব। অধিনায়ককে যোগ্য সমর্থন দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। বোলিং আসলে খারাপ করেননি বাংলাদেশের কোনো বোলারই। লঙ্কানরা ব্যাট হাতে ঝোড়ো শুরুই করেছিল। ২ ওভারে তুলে ফেলেছিল ২২ রান। সেই তারাই পরের ৮ ওভারে তুলতে পারল মোটে ২০। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে আর মাপা বোলিং করে লঙ্কানদের স্বচ্ছন্দে এগোতেই দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। সর্বোচ্চ ২৯ রান এসেছে আটে নামা দিলরুয়ান পেরেরার ব্যাট থেকে, এতেই পরিষ্কার কী কঠিন এক ম্যাচ গেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের।
শুধু বল হাতে নয়, মাশরাফির গুরুত্বপূর্ণ রিভিউ সিদ্ধান্তও এতে বড় ভূমিকা রেখেছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লুর আবেদন নাকচ হলে গেলে রিভিউ নিয়ে সফল হন মাশরাফি। মোস্তাফিজের সৌজন্যে প্রথম উইকেটের (কুশল মেন্ডিস) দেখা পায় বাংলাদেশ। পরের ওভারের শেষ বলে মাশরাফি বোল্ড করে দেন উপুল থারাঙ্গাকে। নিজের তৃতীয় আর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আবার মাশরাফি। এবার দনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। পরিষ্কার এলবি, কিন্তু দনাঞ্জয়া রিভিউ নিয়ে ফেলেন।
সেই ভুলের খেসারত পরে গুনতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। মেহেদী মিরাজের বলে এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ার হাত তুলে দিলে কোনো বেগর বাই না করে সোজা হাঁটা দিতে হয় কুশল পেরেরাকে। অথচ কুশলের প্যাডে লাগার আগে ব্যাটের কানা ছুঁয়েছিল ব্যাট। বাকি ইনিংসে শ্রীলঙ্কা আর রিভিউ পায়নি, এটিও মস্ত বড় সুবিধা বাংলাদেশের।
অবশ্য ম্যাচটা ১৫তম ওভারেই এক রকম শেষ করে ফেলতে পারত বাংলাদেশ। মিরাজের বল আড়াআড়ি চালাতে গিয়ে শনাকা আকাশে তুলে দিয়েছিলেন। সহজ ক্যাচ ছিল বদলি ফিল্ডার নাজমুল ইসলামের জন্য। কিন্তু ‘মাশরাফি ভাই’ ধরবে ভেবে হাতই বাড়ালেন না নাজমুল! এই ভুলটা অবশ্য ভোগায়নি বাংলাদেশকে। ধারাবাহিক উইকেট পতনে শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে গেছে ১২৪ রানেই। আর এতে মরুর দেশে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
অসাধারণ শুরুর পরও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশের দুর্দান্ত এক কৌশলে। মুশফিকের সেঞ্চুরির পরও সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল শ্রীলঙ্কা। পুরো দৃশ্যটা এলেমেলো হয়ে গেল চোট পাওয়া হাত নিয়ে তামিম খেলতে নেমে! মনস্তাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আর ধরতেই পারেনি লঙ্কানরা। বোলিংয়ে এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে মাশরাফিরা মাঠ ছাড়লেন বিজয়ের হাসি হেসে।