ক্রাইমবার্তা র্রিপোট: সাতক্ষীরা: জেলায়:কলারোয়া মাদকসহ আটকের পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মুক্তি, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সাধারণ মানুষের বিভিন্ন হয়রানী করার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পরও বহাল তবিয়তে আটক-মুক্তির বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে থানার উপ-পরিদর্শক রইস উদ্দিনসহ ৩/৪জন পুলিশ কর্মকর্তা। এদিকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাশীন দলের ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি দুর্নীতিবাজ এসব পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গ্রামের সাধারণ আওয়ামী লীগের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে এর ফলে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। অবিলম্বে তারা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত কলারোয়া থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রশাসনিক ব্যব¯’া গ্রহনে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা ও ভুক্তভোগিরা জানান, গত দুই মাস যাবত থানার এসআই রইস উদ্দিন, এএসআই নুর আলী, এএসআই আব্দুল হালিম, এএসআই আলাউদ্দিন, এএসআই গোপল (বর্তমানে ছুটিতে) আসামী আটক বানিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি তারা মাদকসহ আসামী আটকের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, সীমান্তের কয়েকজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর নিকট থেকে চুক্তি ভিত্তিতে টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করছে এর এসব কাছে তারা কলারোয়া সীমান্তের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন। অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগি একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানান, থানা পুলিশের ভয়ে উপজেলার অনেক গ্রাম রাতে জনশুন্য হয়ে পড়ছে। রায়টা গ্রামের সাত্তার মোড়ল (৬০) জানান, গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারনে থানার এসআই রইসসহ কয়েকজন পুলিশ আমাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে আমার পরিবারের কাছ থেকে ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় থানার গোলঘর থেকে ছেড়ে দেয়। কেড়াগাছি ইউপি সদস্য কাশেম জানান, গত ২৮ জুলাই রাতে এসআই রইস, এএসআই গোপাল, এএসআই নুর আলী বোয়ালিয়া বাজার থেকে চার যুবককে আটক করে এবং তাদের দেহ তল্লাশী করে কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। পরে তাদেরকে থানায় নিয়ে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনজনকে ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করে এছাড়া অপর একজন টাকা দিতে না পারায় তাকে ২২ বোতল ফেনসিডিলসহ মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তিনি বলেণ, ৩৪ ধারায় মামলা দেয়া তিনজন পরদিন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। তিনি আরো জানান, ১ আগস্ট বিকালে উপজেলার বেলী গ্রামের ফারুক হোসেন (৪০) নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে উক্ত পুলিশ সদস্যরা মাদক ব্যবসার অভিযোগে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাত ১১টার দিকে ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তেলকুপি গ্রামের আফজাল হোসেন (৪০) জানান, ১১ আগষ্ট সন্ধ্যায় এসআই রইসসহ পুলিশের একটি দল ¯’ানীয় বাজার থেকে কোন কারন ছাড়াই আটক করে। পরে ¯’ানীয় এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন, একই সময় পাইকপাড়া গ্রামের আবদারের ছেলে মিন্টুকে উক্ত পুলিশ সদস্যরা আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে রাত ১১টায় থানা থেকে তাকেও ছেড়ে দেয়া হয়। উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের ফারা সরদার জানান, গত ১৫/১৬ দিন আগে এসআই রইস, এএসআই নুর আলী, এএসআই হালিম তার ছেলে আমিরুল (২৮) কে আটক করে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, একই সময় মোল্লা পাড়ার মহাসিন গাইনের ছেলে হাবিবুর (২৭) কে মাদক ব্যবসার অভিযোগে আটক করে। এঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রাতে তাদেরকে ৩৫ ও ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। একই গ্রামের আসমা খাতুন জানান, ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার ভাই মফিজুলকে (২৫) কোন কারণ ছাড়াই আটক করে এসআই রইস, নুর আলীসহ কয়েকজন পুলিশ পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টো লাল গাইনের মাধ্যমে তার গরু বিক্রয় করা টাকা দিয়ে রাতে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। উপজেলার রাজাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মিলন জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়নের চান্দা এলাকা থেকে ৬০ বোতল ফেন্সিডিলসহ চারজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে থানার এএসআই আব্দুল হালিম ও এএসআই নুর আলী। ঘটনার পর স্থানীয় এক ইউপি সদস্য হবিবুর নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে নেন। যদিও পুলিশের দাবি আটক হাবিবুর তাদের হাত ফসকে দৌড়ে পালিয়েছে। এছাড়া পেচু নামে অপর এক মাদক ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে নিরাপরাধ বলে ছেড়ে দেয়া হয়। এঘনায় মাত্র ২২ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে রাজাপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইমন (১৯) ও লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের রেজাউলের ছেলে সবুজের (৩০) নামে থানায় মামলা (নং-৭/২৯১) দায়ের করে জেলা-হাজতে পাঠানো হয়।
এদিকে গত ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় পৌরসদরের শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে ইয়াবাসেবনকালে উপজেলার তুলশীডাঙ্গা গ্রামের মৃত, মোজাম্মেল হোসেন মোজামের ছেলে মামুন (২৮) কে ৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করেন থানার এসআই রইস উদ্দিন ও এএসআই আলাউদ্দিন। পরে দুই পুলিশের চুক্তি মোতাবেক রাত ১২টার দিকে আটক মাদকসেবী মামুনকে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা হাজত থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বোয়লিয়া গ্রামের ওজুফা বেগম জানান, এসআই রইস ও এএসআই নুর আলী তার ভাই মনিরুল ইসলাম কাছে (চামড়া ব্যবসায়ী) নিকট ৫ লাখ চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত ১১ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে তার বাড়ীতে অভিযানের নামে নাটক সাজায়ে একটি দেশিয় পাইপগান, দুটি ককটেল উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলাব্যাপী থানা পুলিশের প্রতি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
¯’ানীয়দের তৃনমূল আ.লীগ নেতা-কর্মিদের অভিযোগ প্রতিদিন এসব পুলিশ কর্মকর্তারা দিন-রাত আটক-মুক্তির বাণিজ্যের কারণে এলাকার সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বর্তমান সরকারের উপর থেকে আ¯’া হারিয়ে ফেলছে। পুলিশের এসব আটক-নাটক বানিজ্য বন্ধ করা না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি তারা সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়কে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান, থানা থেকে কোন আসামীকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তবে কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্য থানার বাইরে এ ধরনের কাজ করলে তিনি ভুক্তভোগীদের সরাসরি তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
Check Also
সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন
ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …