ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃআলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামী ১০ অক্টোবর।
মঙ্গলবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ দিন ধার্য করেন।
একই সঙ্গে তিনি এই মামলায় জামিনে থাকা সাবেক তিন আইজিপিসহ আটজনের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত সোমবার এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। আজ আইনগত বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান।
এর পরই এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী, দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
আহত হন কয়েকশ নেতাকর্মী। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশসহ (হুজি) তিনটি জঙ্গি সংগঠন হামলা চালায় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দুটি মামলা হয়। এর একটি হত্যা মামলা, অন্যটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা।
হত্যা মামলায় আসামি ৫২ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় ৪১ জন।
৫২ আসামির মধ্যে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৮ জন জামিনে এবং ২৫ জন কারাগারে ছিলেন।
তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ভিন্ন মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ১৮ আসামি পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু হয়।
একই সঙ্গে বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
কারাগারে থাকা আসামি: সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৫ আসামি কারাগারে ছিলেন।
তাদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধসহ অন্য মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
জামিনে থাকা আসামি: এ মামলায় আটজন আসামি জামিনে রয়েছেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক, খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
পলাতক আসামি: আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৮ জন পলাতক আছেন। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।
পলাতক আসামিদের অবস্থান: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। এই দলের নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে।
এ ছাড়া জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন উপকমিশনার (পূর্ব) এবং উপকমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান ও খান সাঈদ হাসান পাকিস্তানে রয়েছেন।