ক্রাইমবার্তা ডেস্করির্পোটঃ
ইয়েমেনে ৫০ লাখের বেশি শিশু দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটিতে চলমান যুদ্ধের কারণে খাবার ও জ্বালানীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সেখানে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বুধবার একথা জানিয়েছে। খবর এএফপি’র।
সংস্থাটি জানায়, ইয়েমেনে খাবারের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে অতিরিক্ত ১০ লাখ শিশু এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এনিয়ে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মোট শিশুর সংখ্যা বেড়ে ৫২ লাখে দাঁড়ালো।
আন্তর্জাতিক এ সংস্থা আরো জানায়, বন্দরে যে কোনো ধরনের অবরোধ লাখো শিশুর জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিবে। এছাড়া আরো কয়েক লাখ শিশুকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিবে।
২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে ইরান সমর্থিত শিয়া হাউছি বিদ্রোহীদের সাথে প্রেসিডেন্ট আব্দেরাব্বো মানসুর হাদি’র অনুগত সৈন্যদের সংঘর্ষ চলছে।
২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন প্রেসিডেন্টের পক্ষে হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সৌদি আরব হাউছিদের সমর্থন দেয়ার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করে। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে।
সেভ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সিইও হেলে থোরনিং স্কিমিড বলেন, ‘ইয়েমেনের লাখ লাখ শিশু জানে না তারা আবার কখন খাবে। কখন তাদের খাবার আসবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তর ইয়েমেনের একটি হাসপাতালে আমি দেখেছি শিশুগুলো এতোই দুর্বল যে কাঁদতেও পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ ইয়েমেনের গোটা শিশু প্রজন্মকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
জাতিসংঘ সর্তক করে দিয়ে বলেছে, হোদেইদায় যে কোনো ধরনের বড় যুদ্ধ হলে ইয়েমেনের ৮০ লাখ লোকের কাছে খাদ্য বিতরণ ব্যাহত হতে পারে। আর এসব খাবারের উপর নির্ভর করেই তারা টিকে আছে।
আরো পড়ুন :
জাতিসঙ্ঘ বিশ্লেষকদের মন্তব্য ইয়েমেনে যুদ্ধাপরাধে দায়ী সব পক্ষ
এপি ও গার্ডিয়ান, ২৯ আগস্ট ২০১৮
জাতিসঙ্ঘের তিনজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে সব পক্ষই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে। দেশটিতে যুদ্ধকালে ধর্ষণ, নিপীড়ন, গুম, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয়ের জন্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন তিন দেশের সরকারকেই তারা দায়ী করেছেন। শিয়া বিদ্রোহীরাও এ অপরাধের দায় থেকে মুক্ত নয়।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রথম রিপোর্টে বিশ্লেষকেরা এসব মন্তব্য করেন। সিরিয়ার বেশ কিছু অংশ পরিদর্শনের ভিত্তিতে তৈরি করা এ রিপোর্ট গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে ইয়েমেন সরকার। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট এ যুদ্ধে ইয়েমেন সরকারের পক্ষ নিয়ে জোরদার অভিযান চালায়।
বিশ্লেষকেরা গত এক বছরে জোট বাহিনীর বিমান হামলায় যেসব ক্ষতি হয়েছে তারও একটি তালিকা তৈরি করেছেন। তারা রিপোর্টে এ লড়াইয়ে ব্যবহৃত হতে পারে এমন অস্ত্র সরবরাহ থেকে বিরত থাকতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন এ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে তারা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। অন্য দিকে বিদ্রোহী হাউছি গোষ্ঠীকে অস্ত্র দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে।
রিপোর্টে বিশ্লেষকেরা বলেন, এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, ইয়েমেন, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব সরকার সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী। রিপোর্টে তাদের বিরুদ্ধে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা, বেআইনি আটক, ধর্ষণ, নিপীড়ন, গুম, শিশুদের যুদ্ধে নিয়োগ ইত্যাদি অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়। অন্য দিকে দেশটির জনবহুল পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল দখল করে রাখা হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও বেআইনি আটক, নিপীড়ন ও শিশু যুদ্ধে নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়।
জাতিসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার সঙ্কট চলছে ইয়েমেনে। এর দুই কোটি জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশেরই ত্রাণসহায়তা দরকার। এ যুদ্ধে দেশটির স্বাস্থ্য সেবাখাতটি একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কলেরাপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয় দেশটি।
বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করেন, তিন বছরের অধিক সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৬৪৭৫ জন নিহত হয়েছে। তবে তারা মন্তব্য করেন, এ ক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক বেশি হতে পারে। রিপোর্টে আরো বলা হয়, যুদ্ধে স্কুল, হাসপাতাল ও বাজারে চালানো বোমা হামলা এবং জোট বাহিনীর বিমান হামলায় অসংখ্য বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সৌদি জোটের আকাশ ও নৌপথ অবরোধ করাও যুদ্ধাপরাধের শামিল।
সৌদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
এ দিকে ইয়েমেনে শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবকে ‘সতর্ক’ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রিয়াদ যদি বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কোনো তৎপরতা দেখাতে ব্যর্থ হয়, তবে ইয়েমেনে অভিযানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা পাচ্ছে তা কমিয়ে ফেলা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট সৌদির নেতৃত্বে আরব জোটের বোমা হামলায় একটি স্কুলবাসে থাকা ৪০ শিশু নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদির কর্মকাণ্ডে ওয়াশিংটন প্রশাসনে অসন্তোষ বাড়ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও মার্কিন সামরিক বাহিনীর মধ্যপ্রাচ্য অপারেশন উইংয়ের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল আলাদাভাবে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকেই সৌদিকে বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু এখন স্পষ্টতই মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করতে হচ্ছে, তাদের পরামর্শ কাজে আসছে না।