ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ যশোরে দু’টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এক লাখ দশ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের দড়াটানায় যশোর ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ঘোপ নাওয়াপড়া রোডে সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই জরিমানা করেন।
ভুয়া প্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট প্রদান ও দালালের মাধ্যমে ভাগিয়ে আনা রোগীদের সাথে অব্যাহত প্রতারণার দায়ে এর আগেও জরিমানা গুণতে হয়েছে বহুল বিতর্কিত যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষকে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান।
বহুল বিতর্কিত যশোর ডায়াগস্টিক সেন্টারে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মীর আবু মাউদকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্যাথলজি বিভাগে তল্লাশি চালিয়ে নিন্মমানের মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রমাণ পান ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক। একই সাথে প্রমাণ মেলে স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি থেকে পাশকৃত কোনো টেকনোলজিস্ট, টেকনেশিয়ান ছাড়ায় প্যাথলজিক্যাল বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া বৈধ কোনো লাইসেন্স। লাইসেন্সের জন্যে মালিকপক্ষ অনলাইনে আবেদন করেছেন দাবি করলেও তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। নোংরা ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে মানুষের সাথে অব্যাহত প্রতারণার সু-নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক গোলাম ছরোয়ারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। একই সাথে নির্দেশ দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার। ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বৈধ কাগজপত্র করার জন্যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছে। একই সাথে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এগুলো করতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।
যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যেই শাহ জালাল ফিজিওথেরাপি সেন্টার নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটিরও কোনো বৈধতা নেই। ফিজিওথেরাপিস্ট ছাড়াই সেখানে নিয়মিত মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালত শাহ জালাল ফিজিওথেরাপি সেন্টারটি সিলগালা করে দিয়েছে।
এর আগে গত ২৬ জুন যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালান ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান। ওই অভিযানে প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ডায়াগন্টিক সেন্টারটির মালিকপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে প্রায় চার মাসেও শুধরায়নি। বরং দালাল নির্ভর প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাজিব হাসান ও সিভিল সার্জন কার্যলয়ের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মীর আবু মাউদ যশোর ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান গিয়ে ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পান। ভারতীয় নাগরিক এমকে চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মোটা টাকা ফি নিয়ে রোগী দেখছিলেন। তিনি এমবিবিএস পাশ এমন কোনো সনদপত্র দেখাতে পারেননি। স্বীকার করে নেন তিনি ডাক্তার নন। ভুয়া ডাক্তার দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণার দায়ে সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার সঞ্জয়ের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক কামরুজ্জামান পালিয়ে যাওয়ায় প্যাথলজিক্যাল বিভাগটি সিলগালা করে দেয়া হয়। একই সাথে ভুয়া ডাক্তার এমকে চক্রবর্তীকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেয়া হয়।
পৃথক দু’টি অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতে পেশকার শেখ জালাল উদ্দিন ও পুলিশ-বিজিবি এবং মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সদস্যরা অংশ নেন।