রাজনৈতিক অঙ্গন ঘিরে উত্তপ্ত সাতক্ষীরা

আবু সাইদ বিশ্বাসঃক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ   সাতক্ষীরা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অঙ্গীকারনামা তুলে ধরেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রতি দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তরে দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী সভায় নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া অব্যাহত রেখেছে। তবে নির্বাচনি সভা সমাবেশ থেকে পিছিয়ে রয়েছে সরকার বিরোধী শিবির। বিএনপির দাবী তারা নির্বাচনী কর্মসূচির সুযোগ পাচ্ছে না। কোন কর্মসূচি দিলে পুলিশ তা পন্ড করে দিচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের বেশির ভাগ নেতাকমীর নামে কয়েক দফায় মামলা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনি প্রার্থীদের কয়েক ডর্জন মামলায় আসামী করা হয়েছে। প্রতি দিন বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। ফলে সব দলের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা ভোটারদের কাছে পর্যন্ত পৌছাতে পারছে না তারা। তাই আগামি নির্বাচনে প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারলে জেলা সবকটি আসন ক্ষমতাসীনরা লুটপাট করে ভাগা ভাগি করে নিবে আশঙ্কা বিরোধী শিবিরে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জেলাতে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে৷ অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তারিকুল হাসান বর্তমানে কারাগারে। আর জামায়াতের সাবেক দুই জেলা আমীর সহ সহ¯্রাধীক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছে।
এমন অবস্থায় নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠনসহ চারদফা দাবীতে বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল বের হলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। এতে পন্ড হয়ে যায় কেন্দ্র ঘোষিত মিছিলটি। এ সময় পুলিশ মিছিল থেকে জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যনন্দ সরকার, বাসদের সদস্য অ্যাড. খগেনচন্দ্র ঘোষ ও প্রশান্ত কুমার রায়কে আটক করে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
তফসিল ঘোষণার পূর্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পূর্বে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া সহ চারদফা দাবীতে দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাম গণতান্ত্রিক জোট এ বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে।
অন্যদিকে একই সময়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে জেলার দেবহাটায় নির্বাচনী পথসভা করেছে সাতক্ষীরা ৩ আসনের সংসদ সদস্য আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। এসময় তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তিনি বলেন চলতি বছরের শেষে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে।
প্রতিদিন নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে তালা কলারোয়া আসনে সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী,ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি,আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দ দিদার বখত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলুসহ অনেকে।
অন্যদিকে আসনটিতে জামায়াতের একক প্রাথী জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিঠির সদস্য সচিব মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচনি কর্মসূচি পালনের কোন সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে। তাদেরকে কয়েক ডর্জন মামলার আসামী করা হয়েছে। বর্তমান সরকারে আমলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহকে কয়েক দফায় কারাবরণ করতে হয়েছে। তালা ও কলারোয়া দুটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১০৫ (সাতক্ষীরা-১) এ আসনটি। দেশ স্বাধীনের পর আসনটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৪ বার,বিএনপি ,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয়পার্টি ,ওয়ার্কার্স পার্টি একবার করে জয়লাভ করে। আসনটিতে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে দলীয় নেতাকমীরা জানান। তারা জোট গত নির্বাচন হলে বিএনপিকে আসনটি ছাড় দিতে নারাজ।
নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে সাতক্ষীরা-০২ আসন থেকে সরকার দলীয় মনোনয়ন প্রতাশীরা। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, আ’রীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আ.হ.ম তারেক উদ্দিন, সাবেক সচিব সাফি আহমেদ, ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রতি দিন সাতক্ষীরা সদর চষে বেড়াচ্ছে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল আলিম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ জলিল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ফারুক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেওয়ার তাজকিন আহমেদ চিশতি, সাতক্ষীরা জামায়াতে ইসলামির সাবেক আমীর কেন্দ্রীয় নেতা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক মনোনয়ন প্রত্যাশী । এদের মধ্যে জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক রাজনৈকি কারণে অর্ধশতাধীক মামলায় বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা কারাগারে।
সাতক্ষীরার রাজনীতিতে এ আসনটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা চার দশকে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একবার নির্বাচিত হলেও ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয় লাভ করে।
সাতক্ষীরা-০৩ আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে যারা নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন তারা হলেন, কন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী, ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোখলেছুর রহমান, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেন্স এন্ড টেকনোলজির উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম, লে.কর্ণেল জামায়েত হোসেন, দেবাহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব আব্দুল গনি, জেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও জর্জ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. আজাহার হোসেন, কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি গোলাম রসূল বিপ্লব, কবি সালেহা আকতার, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাড. স. ম সালাউদ্দিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহিদুল আলম অন্যতম। আসনটি থেকে এপর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থী চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাতক্ষীরা জেলা শাখার আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাসার আসনটিতে জামায়াতের দলীয় মনোয়ন প্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্র জানায়। একরণে তাকে কয়েক ডর্জন মামলায় আসামী করা হয়েছে ।
সাতক্ষীরা -০৪ শ্যামনগরের বির্স্তীর্ণ জনপদের ১২টি ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়েছে কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়ন। মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আ’লীগের মনোনয়ন পেতে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার এমপি, সাধারণ সম্পাদক এস এম আতাউল হক দোলন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ জাফরুল আলম বাবু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আজম লেলিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য ও নুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জি এম বখতিয়ার আহম্মেদ, কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মাসুদা খানম মেধা, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এইচএম গোলাম রেজা, কালিগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশেক-ই-এলাহী।
অন্যদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিন ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম দলীয় মনোয়ান প্রতাশী। বছরের বেশির ভাগ সময়ে তাকে কারাগারে আটকানোর চেষ্টা করে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রশাসন।
বিশ্লেষকরা বলছে,সুষ্ঠু ভোট হলে সাতক্ষীরা জেলা সবকটি আসনে সরকার দলীয় প্রার্থীর সাথে জামায়াতের প্রাথীর শক্ত লড়াই হবে। আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা ২০/০৯/১৮

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।