ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃদেড় যুগ আগে বাংলাদেশ যখন টেস্ট আঙিনায় পা রাখে, তখন ক্রিকেটেই হাতেখড়ি হয়নি আফগানিস্তানের। ১৮ বছর পর ইতিহাস, ঐতিহ্য, রেকর্ড, পরিসংখ্যানে আফগানদের চেয়ে ঢের এগিয়ে টাইগাররা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে এর ছিটেফোঁটাও নেই।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে একাধিপত্য করে যাচ্ছেন আফগানরা। এশিয়া কাপেও ব্যতিক্রম ঘটল না। ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে মাশরাফি বাহিনীকে লজ্জা উপহার দিল আসগার ব্রিগেড। গেল জুনেই ভারতের দেরাদুনে ৩ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের আফগানিস্তানের কাছে ৩-০তে ধবলধোলাই হওয়ার লজ্জায় ডুবতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
২৫৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। স্কোর বোর্ডে ১৭ রান উঠতেই দুই ওপেনারকে হারায় টাইগাররা। প্রথম উইকেটের শিকারী আফগান তরুণ তুর্কি মুজিব-উর-রহমান। তার বলে আফতাব আলমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পরও ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারেননি লিটন দাস। খানিক বাদে আফতাব আলমের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন তিনি।
পরে মুমিনুল হককে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন সাকিব। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি মুমিনুল। মাত্র ৯ রান করেই ফেরেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা এ ব্যাটসম্যান। শিকারী গুলবাদিন নাইব। এর পর তাদের পথ ধরেন মোহাম্মদ মিথুন। সেই গুলবাদিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এতে খাদে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপর্যয়ের মধ্যে বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান সাকিব। তাকে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন টাইগাররা। তবে স্বপ্ন ভেস্তে যায় রশিদ খানের দুর্দান্ত গুগলিতে সাকিব (৩২) বোল্ড হয়ে ফিরলে।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রশিদ খানের বলে ক্রিজে নামার পর থেকেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না তিনি। সেই তারই বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মিস্টার কুল। এতে খাদে পড়ে বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে মেহেদী মিরাজ আউট হলে পাঁকে পড়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। রহমত শাহর বলে হাশমততুল্লাহ শাহিদিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে আর উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। রশিদ-নবী-মুজিব-নাইবদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ৪২.১ ওভারে ১১৯ রানে গুটিয়ে টাইগাররা। আফগানদের হয়ে রশিদ, নাইব, মুজিব প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। সূচনালগ্নেই ইহসানুল্লাহকে ফিরিয়ে দেন আবু হায়দার রনি। খানিক বাদেই রহমত শাহকে ফিরিয়ে অভিষেক ম্যাচে স্মরণীয় শুরু করেন তিনি। পরে হাশমতউল্লাহ শহিদিকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠেন মোহাম্মদ শাহজাদ। ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন তারা। ৫১ রানের জুটি গড়ে চোখ রাঙাতে থাকেন এ জুটি। শাহজাদকে (৩৭) বাউন্ডারি লাইনে আবু হায়দারের তালুবন্দি করে তাদের চোখ রাঙানি থামান সাকিব আল হাসান। কিছুক্ষণ পরই অধিনায়ক আসগর আফগানকে সাজঘরে পাঠিয়ে আফগানিস্তানকে চেপে ধরেন তিনি।
পরে সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকে নিয়ে চাপ কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেন শহিদি। সেই পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। স্পিন ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত করে সেনওয়ারিকে ফেরান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরলেও ক্রিজে থেকে যান শহিদি। বাংলাদেশ বোলারদের রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে ছাড়েন তিনি। অবশেষে তাকে সরিয়ে পথের কাঁটা সরান রুবেল হোসেন। লিটনের কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরার আগে ৫৮ রান করেন হাশমতউল্লাহ শহিদি। এরপর মাঠে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মোহাম্মদ নবী। ব্যক্তিগত ১০ রান করে সাকিবের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি। তখন পর্যন্ত লাগাম ছিল বাংলাদেশের হাতে।
এরপরই দৃশ্যপটে রশিদ খান। তিনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন আফগানিস্তানের সংগ্রহ ১৬০/৭। এসে গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। রীতিমতো ঝড় তোলেন ‘ব্যাটসম্যান’ রশিদ। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন নাইব। এতে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। রশিদ-নাইব তাণ্ডবে এলোমেলো হয়ে যায় টাইগার বোলিং লাইনআপ। তাদের বিপক্ষে আবু হায়দার, মাশরাফি, মিরাজ, রুবেলদের কেউই সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটেই ২৫৫ রান করে আফগানিস্তান। রশিদ-নাইব, দু’জন মিলে গড়েন ৫৭ বলে ৯৫ রানের জুটি। টাইগার বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে শেষ ৫ ওভারে তারা তোলেন ৫৭ রান। রশিদ খান ৩১ বলে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে। গুলবাদিন নাইব করেন হার না মানা ৪২ রান। বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট নেন সাকিব। আবু হায়দার নেন ২ উইকেট।