ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃসুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সঠিক কথা বলার কারনেই বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগ করোতে ও পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেছে সরকার। তিনি বলেন,
নিম্ন আদালতের জজেরা স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারছেন না। দেশের মানুষ আজ অসহায়। সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন রায় এবং কোন রায় দেয়ার আগে পরিনতি কী হবে, সেটি রায়ের আগে স্মরণ করিয়ে দেয়। সমস্ত বিচার বিভাগ এখন নির্বাহী বিভাগের ভয়ের মধ্যে রয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে রায় লিখতে পারছেন না। রায় ঘোষণাও করতে পারছেন না। সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলনে রায় দিচ্চে হচ্ছে তাদের।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন এসব কথা বলেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িন নন। কাজেই তিনি সরকারকে বিপদে ফেলতে এ রকম বই লেখেননি বা প্রকাশ করেননি- এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
এক প্রশ্নের জবাবে জয়নুল বলেন, এসকে সিনহা বিচারপতির দায়িত্ব পালন করার সময়ই বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলেছেন। এসকে সিনহা দায়িত্ব পালন করা অবস্থায়ই বলেছিলেন দেশের অধস্তন আদালতগুলোকে সরকার নিয়ন্ত্রন করছে উচ্চ আদালতকে কব্জায় নিতে চায়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ও সরকার বিপদে ফেলতে এরকম করছে কিনা জাস্টিস সিনহা? এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল বলেন, এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। আর তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তিনি একজন বিচারপতি। তিনি বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কথা বলেছেন।
জয়নুল বলেন, সে সময়ের আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞার জাস্টিস সিহনাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আপনার সঙ্গে এক এজলাসে বসে বিচার কাজ পরিচালনা করতে চায় না। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার এরকম বক্তব্য ছিল সংবিধান পরিপন্থী। বিচারপতি এসকে সিনহা অটল ছিলেন। স্বাধীনতা পরিপন্থী কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে চাননি সিনহা। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে এসকে সিনহাকে দেশ ত্যাগ করাতে এবং পরে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে সরকার।
তিনি বলেন, আমরা সে সময় আপনাদের [গণমাধ্যম] মাধ্যমে পরিস্কার করেছি যে মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নয়। তখনই বলেছিলাম যে ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সিনহাকে দেশ ত্যাগ করাতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি অত্যান্ত গভীরভাবে লক্ষ করেছি যে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে এখন নির্বাহি বিভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেছে।
গণতন্ত্রের পুর্ব শর্ত হচ্ছে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের চাপের মুখে রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতির অন্তরজালা আছে। তার কারণ বাংলাদেশের বিচার বিভাগে তার অনেক অবদান আছে। সেই কারণেই তার অন্তরজালা রয়েছে। এটা মনগড়া কথা নয়। এটা বাস্তব। বাস্তব কথাই বলেছেন সিনহা। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাহী বিভাগ পূর্ণ করায়ত্ব করতে যাচ্ছে সরকার। যখন তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন তখনই তিনি এ কথা গুলো বলেছিলেন।
নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার দায়িত্ব পালনের সময় বিচারপতি এসকে সিনহা এমন কথা বলেন নাই বলে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সঠিক নয়।
জয়নুল বলেন, এসকে সিনহা বিচারপতি থাকা অবস্থায় এ কথা গুলো বলেনছিলন। জয়নুল বলেন, সিনহা বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ খেয়ে ফেলছে। নিম্ন আদালতগুলো অলরেডি করায়ত্ত করে ফেলেছে। উচ্চ আদালতও করায়ত্ত্ব করতে চাচ্ছে। বিচারপতি সিনহাকে পদত্যাগ করানোর পরেই আরো একটি ভীতি সঞ্চয় করানো হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের ওপর। সিনহার পদত্যাগের পরেই খালেদা জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায়ল রায়টিও বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে। আমরা বার বার বলেছি বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। খালেদা জিয়া এই মামলার বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য। তারপরও ওই মামলায় তাকে সম্পৃক্ত করা হয়ছে। রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বিচার বিভাগকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। চাপ প্রয়োগ করে এই রায় রায় হাসিল করেছে সরকার। খালেদা জিয়ার বিচার করতে কারাগারের ভিতরে আদালত বসিয়ে চাপের মুখে খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম রহমান ভূঁইয়া, এডভোকেট গোলাম মোস্তফা, কোষাধক্ষ্য নাসরিন আক্তার, সহ-সম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মিয়া, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট মো. ফারুক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।