ক্রাইমবার্তা রিপৌট: জাসদ সভাপতি ও সরকারের তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, আমরা যখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি, তখন বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ড. কামাল গং রা নির্দলীয় সরকারের দাবী আদায়ের নামে মূলত: বিএনপি-জামায়াতকে রাজনীতিতে পূনর্বাসন করতে চান। তারা আসলে নির্বাচন চান না, তারা অস্বাভাবিক সরকার চায়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার আর কখনোই যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে ক্ষমতায় বসতে দিবেনা। সেই সাথে খালেদা জিয়াকেও আর কখনো ক্ষমতায় আসতে দেয়া ঠিক হবেনা। যেকোন মূল্যে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। তিনি শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কে জেলা জাসদ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জনসভায় ইনু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন সারাদেশে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করি তখন থেকেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। শত চেষ্টা করেও উন্নয়ন থামাতে না পেরে তারা আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের মত প্রবীন রাজনীতিবিদরা। তারা আসলে দেশে কোন নির্বাচন চান না, তারা দূর্নীতিবাজ খালেদা জিয়া আর যুদ্ধাপরাধীদের পুনরায় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে চান। ড. কামাল হোসেন বিএনপি এবং জামায়াতকে রাজনীতিতে পূনর্বাসনের ওকালতি শুরু করেছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ড. কামাল হোসেন বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছেন। কিন্তু কোন চেষ্টাতেই বিএনপি-জামায়াতের শেষ রক্ষা হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
বগুড়া জেলা জাসদের সভাপতি রেজাউল করিম তানসেনের সভাপতিত্বে জাসদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। জনসভায় জাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক এমদাদকে বগুড়া সদর আসনে দলের এমপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়।
উল্লেখ্য, বগুড়া সদর আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব নূরুল ইসলাম ওমর বর্তমান সংসদস্য। এ আসনে জাসদও জোটের প্রার্থী হতে চায় । এ ছাড়া আ’লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিনও দলের মনোনয়নের জন্য কোমরবেঁধে মাঠে নেমেছেন। ফলে এ আসনে ত্রিমুখী মনোনয়ন লড়াই শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুন : জাতীয় ঐক্যের মঞ্চ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৪৮
জাতীয় ঐক্যের মঞ্চ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার পূর্ব শর্ত হিসাবে বেগম খালেদা জিয়া সহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি না দিলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।
শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মান্না বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যে সরকার গঠন হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি কামনা করে মান্না বলেন, সেনাবাহিনীই পারে জনমনে অাস্থা ফিরিয়ে আনতে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলেও মত দেন তিনি। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়ে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন।
সমাবেশে উপস্থিত আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আব্দুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান নূর হোসেন কাশেমী প্রমুখ।
আরো পড়ুন : মঞ্চে ড. কামাল-মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র রাজনীতিবিদরা
নিজস্ব প্রতিবেদক ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০২
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ শুরু হয়েছে। বিকাল তিনটার কিছু পরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এ সমাবেশ শুরু হয়।
মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মঈন খান। এছাড়া উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ঢাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান মনসুর আহমেদ, জাসদ (রব) সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিপুল নেতাকর্মী।
কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এ নাগরিক সমাবেশ করছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর।
এদিকে, সমাবেশে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।
মাসখানেক আগে যুক্তফ্রন্ট (বিকল্পধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য) এবং গণফোরাম জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে একমত হওয়ার পর থেকেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। পর্দার আড়ালে বিএনপির সাথেও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে এক ধরনের সমঝোতায় পৌঁছান ড. কামাল হোসেন। বাম ঘরানার আরো বেশ কিছু দল জাতীয় ঐক্যে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৃহত্তর ঐক্য গঠনে জড়িত অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সব দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে অভিন্ন দাবি নিয়ে এখন রাজপথে নামতে চায় দলটি।
যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া যৌথভাবে তাদের যে দাবি ঘোষণা করেছে, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা চাননি। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। ঘোষণার আগে এ নিয়ে তাদের সাথে বিএনপির কথা হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শেখ হাসিনার সরকার মতায় থাকলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব নয়। যেহেতু সবার সুর একই, তাই বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা না চাইলেও জাতীয় ঐক্য গড়তে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে যুক্তফ্রন্ট বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কোনো বাধাও থাকবে না।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা কয়েকদিনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে। জানা গেছে, এই ঐক্যের নেতা কে হবেন তা নিয়েও দলটি আলোচনা করেছে। যুক্তফ্রন্টে থাকা তিনটি দল এবং গণফোরামসহ অন্যান্য দল সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনীত করলে বিএনপির তাতে আপত্তি থাকবে না।
ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। আর যেখানে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে, সেখানে দলীয় নেতৃত্ব থাকবে। কোন দল থেকে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দল ঠিক করবে। এটি একজন বা দু’জন করে হতে পারে।
বিএনপির ৭ দফা :
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সাত দফা দাবি চূড়ান্ত করেছে।
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই- ক) জাতীয় সংসদ বাতিল, খ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
২. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ). নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।
৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা।
৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা।