বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ধারণা, শেখ হাসিনা ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন: পররাষ্ট্র সচিব

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ  আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন, এমন ধারণাই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পোষণ করছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে এখন নিউইয়র্কে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের সরকার বা সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠক হচ্ছে।

বুধবারও এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

এসব বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করতে এসে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, গ্লোবাল রিডিং হল, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবেন। এ জিনিসটা আমরা আলোচনার মধ্যে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি।

বুধবার দিনের শুরুতেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক উচ্চপর্যায়ের সংলাপে অংশ নেন শেখ হাসিনা।

পরে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কের্স্টি কালিজুলেইদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিশ্চিয়ানা স্ক্র্যানার বারগেনার জাতিসংঘ সদর দফতরে আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

এসব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এ বিষয়ে ব্রিফ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন এজেন্সিপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সামনের বছর উনার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে তাদের দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করে উনার যে ভূমিকা রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, ইন্টিগ্রেশনের ক্ষেত্রে; এই কথা চিন্তা করে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, উনার একটি ধারাবাহিকতা থাকবে এবং তারা আশা করছেন, উনি আবার বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকবেনI

‘উনারা প্রধানমন্ত্রীকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আবার উনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে পাবেন বলেই তারা আশা করছেন,’ মন্তব্য পররাষ্ট্র সচিবের।

শহীদুল বলেন, তারা আশা প্রকাশ করেছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে ধারাবাহিকতা আছে, এটি অব্যাহত থাকবে।

দ্বিপক্ষীয় এসব আলোচনায় নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা পরিস্থিত এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিবI

তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে উনার যে উদার নীতি, মানবতা; এটি সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে উনি যে একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, সেটিরও প্রশংসা করেছেন।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে গত বছরের আগস্ট থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগেও কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে আসা চার লাখ রোহিঙ্গাকে বহন করছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের বাস্তুচ্যুত লোকজনকে গ্রহণ করা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেছেন- এরা যেন দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন একটি চাপ সৃষ্টি করে।

শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান যে মিয়ানমারের ভেতরেই রয়েছে, সে কথাও বৈঠকে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

‘সবাই একমত হয়েছে, এটির সমাধান মিয়ানমারে খুঁজতে হবে। এটির সমাধান বাংলাদেশে নেই। সে জন্য তাদের (রোহিঙ্গা) দেশে ফিরে যেতে হবে এবং তাদের দেশে ফিরে গিয়েই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, যতদিন না তারা ফিরে যাবে… স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশ তাদের দেখাশোনা করবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায়I’

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রসঙ্গও এসব বৈঠকে আসে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যেহেতু, কক্সবাজার খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যাও বাড়ছে। ফলে ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনার কথা উনি (প্রধানমন্ত্রী) তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার এই উদ্যোগে যেন সহায়তা করে।

বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে, তার সারমর্ম তুলে ধরে শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, সেই বিষয়টির খুব প্রশংসা করেছেন তারা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে একটা অভূতপূর্ব উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এটি সবাই বলেছে। তারা সবাই জানতে চায়- এটি কী করে সম্ভব হল।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।