ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃজাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমন্বয়ক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংসদে পাস করানো আইন ফেল করানো যায়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সংবিধান বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ফেল করানো হবে। যদি এ আইন প্রত্যাহার না করা হয় তবে যারা এ আইন পাস করেছে তাদেরকে ফেল করানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আর এ স্বাধীনতা রক্ষা করাই হবে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের প্রতিশ্রুতি।
গতকাল বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ সব কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের আহ্বায়ক কবি হাসান হাফিজের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক মো. ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, পারভীন সুলতানা ঝুমা ও জাহিদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু যারা ক্ষমতায় তারা সেটার টুটি চেপে ধরেছে। ক্ষমতাসীনরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন অথচ সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য আজ আন্দোলন করতে হচ্ছে। মুখে বলছে এক আর কাজ করছে তারা উল্টো। এটা মুনাফেকের দেশে পরিণত হয়েছে। কালো কোর্ট পরে যারা দুর্নীতি করে আবার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাও জানায় তারা মোনাফেক। তারা কালো কোর্টের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। কুরআনে আছে কাফেরদের চাইতেও মোনাফেক খারাপ।
তিনি বলেন, আমাদের হতাশ হলে চলবে না। কোটা আন্দোলন ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখনো টিকে আছে। তারা দেখিয়েছে এ দেশ দালালদের দেশ না। চাটুকারীদের দেশ নয়। তরুণদেরকে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের আন্দোলনে পুলিশের পাশে সাদা পোশাকধারী লাঠিয়ালবাহিনী কারা, জনগণকে লাঠিপেটা করেছে তারা কারা? এ কাজগুলো সংবিধান পরিপন্থী।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার বঙ্গবন্ধু সংবিধানে স্বাক্ষর করে দিয়ে গেছেন। সেই অধিকার তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হবে। বিশৃংখলা নয়, শৃংখলার মাধ্যমে আন্দোলন করে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য জাতীয় ঐক্য জরুরি। জাতীয় ঐক্য কোনো দলের নয়, এটা দেশের ১৬ কোটি জনগণের ঐক্য। রাস্তায় না নামলে সমস্যার সমাধান হবে না। রাস্তায় না নামলে সরকার মনে করে কিছু হবে না। স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে দেশে গণতন্ত্র থাকে না। বর্তমানে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ একটি অসভ্য আইন। এর চাইতে খারাপ কোনও আইন আর হতে পারে না। বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র করতে হলে গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দিতে হবে। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ মানে ফ্যাসিজম। এটাই এখন বাংলাদেশ চলছে।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের জন্য শুধু নয়, সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাও হরণ করেছে। এমন আইন করা হয়েছে যা সত্য প্রকাশ করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এ আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মরহুম সাংবাদিক আতাউস সামাদের মতো এখন সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি খুব খারাপ। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিরাপত্তার জন্য হুমকি, গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি। এ আইনে মুক্ত সাংবাদিকতা করা অসম্ভব। এ সময়ে যদি আতাউস সামাদ বেচে থাকতেন তাহলে এ আইনের বিরুদ্ধে তিনিই সর্বপ্রথম রুখে দাঁড়াতেন।
সভাপতির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে একটি কালো আইন সংসদে পাস করিয়েছে। এ শুধু সংবাদপত্রের জন্য নয় গোটাদেশের মানুষের জন্য খারাপ একটি আইন। এ আইন বাতিলে ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যপ্রক্রিয়া দেশের মানুষের আশার আলো দেখাবে।