শহীদুল ইসলাম: ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরাবাসির জন্য একটি অভিশপ্ত দিন। ভয়াল ও আতঙ্কের তো বটেই। ২০০২ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুরের মেলা চলাকালিন রকসি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামের লায়ন সার্কাসে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে নিহত হয় তিনজন। আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ। সিনেমা হল থেকে নামতে যেয়ে পদপিষ্ঠ হয়ে আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক। মুহূর্তের মধ্যে সাতক্ষীরা শহরে নেমে আসে চরম আতঙ্ক। মানুষ যে যার মত ছুটতে থাকে। শহর জুড়ে নেমে আসে পাথরের নীরবতা। সেই দিনের কথা মনে হলে আজও আৎকে ওঠেন সাতক্ষীরাবাসি।
জানা যায়, ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৭টা ও পৌনে ৮টায় শহরে গুড়পুকুরের মেলা চলাকালিন যথাক্রমে রকসি সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে লায়ন সার্কাসে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। হামলায় দেবহাটা উপজেলার চক মাহমুদপুরের হাফিজুর রহমান, সদর উপজেলার লাবসার কাজী রিফতাউল আলম মুক্ত ও শহরের ইটাগাছার সেলিনা পারভিন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে হাফিজুর রহমান আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের আশায় বিদেশ যাবার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি। আজও নিহতদের স্বজনরা ভুলতে পারেনি সেদিনের সেই বিভৎস স্মৃতি। বোমা হামলায় ৫০ জনেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু আহত হয়। ওই রাতেই লায়ন সার্কাসের ম্যানেজার মানিকগঞ্জ জেলা সদরের নবগ্রামের সন্তোষ সরকার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ শাজাহান খান ১০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন।
পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ সিআইডি’র সহকারি পুলিশ সুপার মাওলা বক্স সন্দিগ্ধ সকল আসামীকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বিএনপি’র আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ধরণের বোমা হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও কাউকে সনাক্ত করা হয়নি।
এদিকে বোমা হামলার পর থেকে কয়েক বছর গুড়পুকুর মেলা বন্ধ থাকে। ধীরে ধীরে মেলার পরিসর সংকীর্ণ হয়ে তা দেওয়াল বন্দী হয়ে পড়ে। একই প্রভাব লক্ষ্য করা যায় জেলার সিনেমা হলগুলোতেও। বোমা হামলার পর থেকে সিনেমা হলগুলোতে দর্শকের ভাটা পড়ে। একপর্যায়ে মফ:স্বল এলাকার সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শহরের তিনটির সিনেমা হলের দুটি চলছে কোন রকমে। বন্ধ হয়েছে গেছে রকসি সিনেমা হল। সেই সাথে বন্ধ হয়ে জেলার সাধারণ মানুষের বিনোদনের দরজা। হারিয়ে গেছে জেলার গুড়পুকুরের মেলার ঐতিহ্য। মেলায় আর আগের মত সেই বাঁশি বাজে না। দেখা যায় না মাটির তৈরি জিনিস, বেত ও বাঁশের তৈরি পণ্য, লোহার তৈরি দা, কোদাল। গাছের চারা এখন গুড়পুকুর মেলা থেকে নির্বাসনে। ইলিশ আর বাতাবি লেবু উধাও হয়েছে বাণিজ্যিকীকরণের ঠেলায়। গ্রামীন ঐতিহ্য আর বিনোদনের খোরাক গিলে ফেলেছে কথিত ‘ইস্টইন্ডিয়া’ কোম্পানীর লোকেরা।
এদিকে জেলার সচেতন মহলের পক্ষ থেকে পত্রদূতকে জানানো হয়েছে, গুড়পুকুর মেলা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে দেওয়াল বন্দী করায় মেলার ঐতিহ্য ধ্বংস হয়েছে। এবার জেলার আরেক ঐতিহ্য প্রাণ সায়ের দিঘি তথা পৌর দিঘি ধ্বংস করা হচ্ছে। মেলায় কয়েকশত দোকান বসানো হয়েছে। প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে তিনজন কর্মচারী রয়েছে। এতে করে সহ¯্রাধিক মানুষ প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ফেলছে দিঘিতে। দিঘির পানি দূষিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। নষ্ট হচ্ছে দিঘির সৌন্দর্য। এমতাবস্থায় গুড়পুকুর মেলা আগের রূপেই দেখতে চান জেলাবাসি।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …