সিইসি বাকশাল মার্কা মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে : রিজভী

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ     এবারে নির্বাচনে না এলে নাকি নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়বে বিএনপি’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সিইসি বলেছেন, ওই কথা। যিনি কুমিল্লায় ডিসি থাকার সময় জনতার মঞ্চ তৈরী করেছিলেন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করেছিলেন। ক্ষমতাসীনদের সাথে মিশতে মিশতে, বাকশালী সংস্কৃতির স্পর্শ পেতে পেতে শাসকগোষ্ঠীর মনের মানুষে পরিণত হওয়া সিইসিকে একবোরেই খাঁটি বাকশাল মার্কা মুখপাত্রে পরিণত হয়েছেন। তবে আমি সপাটে সিইসিকে জানিয়ে দিতে চাই- যদি বিএনপির নিবন্ধন নিয়ে কোনো অশুভ প্ল্যান থাকলে অবৈধ সরকারের পাশাপাশি সিইসিকেও পতনের ঝুঁকিতে পড়তে হবে।

আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়বে’ এই কথা বলে কি সিইসি বিএনপিকে ভয় দেখাচ্ছেন, যাতে বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে একতরফা বাকশালী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এতগুলো ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেই নির্বাচনগুলোকে সুষ্ঠু বলে অভিহিত করেছেন, যে সিইসি সরকারী দলের ভোট নিয়ে অনাচারের বিষয়ে ‘স্পীকটি নট’ থেকেছেন, তিনি যে ক্ষমতাসীনদের ভাষাতেই কথা বলবেন সেটাই স্বাভাবিক। তার এহেন কথা শুনে মনে হয়- পাতানো নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন তিনি।

রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের প্রধান আধিকারিক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের দাসত্ব করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেজন্য তাদের কথার বাইরে এক ধাপ এগুতে পারেন না। তবে সিইসিকে বলে রাখি- একটি জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলের অতীত অর্জন, কীর্তি, সংগ্রাম ও অঙ্গীকার রক্ষার মধ্য দিয়ে জনগণের ভেতরে যে মজবুত অবস্থান তৈরী হয়, সেই দলের রেজিস্ট্রেশন থাকে জনগণের হাতে। জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে কাগুজে নিবন্ধনের ঝুঁকির কথা বলে লাভ হবে না। জনগণের বিচারই রাজনৈতিক দলের টিকে থাকার মাপকাঠি। কোনো আত্মা বিক্রি করা ব্যক্তি কর্তৃক যখন জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের ঝুঁকির কথা বলে যে হুমকি দেয়া হয় তাতে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকের আক্রমণ উপেক্ষা করে লড়াইয়ে লিপ্ত সাহসী জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতাকর্মীরা সেই হুমকিতে বিচলিত হয় না বরং ভোটাধিকার হরণের জন্য দায়ী সিইসি ভোটারদের অভিশাপে নিজের আত্মপতনের অন্ধকার গহব্বরে হারিয়ে যাবে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া নব্য বাকশালী সরকারের প্রতিভূ এই সিইসি কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনের ‘ডার্ক ম্যাটার’ হচ্ছেন এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

রিজভী বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাটা সিইসি কর্তব্য বলে মনে করেন না, আওয়ামী সরকারের প্রতি আনুগত্যই তার শেষ কথা। আর এজন্যই তিনি ভোটকেন্দ্রে বেশিক্ষণ সাংবাদিকদের থাকতে দিতে চান না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দিনমান ভোটগ্রহণ চলাকালে ক্ষমতাসীনদের ভোট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, বলপ্রয়োগ করে ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেয়া ও ভোটের ফল ছিনিয়ে নিতে সহায়তা করতেই এই পদক্ষেপের কথা বলছেন সিইসি। কে এম নুরুল হুদার এই বক্তব্য ভোটারবিহীন ‘শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচন স্টাইলের’ প্রতিধ্বনি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সম্মান রক্ষার্থে বিবেক বিকিয়ে দেয়া এই সিইসিকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে এখন ভোটাধিকারহারা জনগণ ঐক্যবদ্ধ। কে এম নুরুল হুদাদের মতো বিশস্ত সেবকদের কারণেই শেখ হাসিনা পরীক্ষিত স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে পেরেছেন।

গতকাল সারাদেশে গ্রেফতার ও মামলার চিত্র তুলে ধরে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, দিনাজপুর জেলায় আলীউর রহমান মন্টু, মেহেরপুর জেলায় ছাত্রদলের নাজমুল হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশজুড়ে পঙ্গপালের মতো গায়েবী মিথ্যা মামলা বিস্তার লাভ করেছে। প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ১৪টি গায়েবী মিথ্যা মামলার এজাহার পাওয়া গেছে। এজাহারে মোট ৩২৭১ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকালের মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে।

রিজভী জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে মোট গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে ৪০৪৩টি, এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ৮৪,০১১ জন নেতাকর্মীকে এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ২,৬৬,৭৩০ জনকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪২৯২ জনের অধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে। মোট আসামি করা হয়েছে ৩,৫০,৭৪১ জন নেতাকর্মীকে।

তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে শুধু গায়েবী মিথ্যা মামলাই দায়ের করা হচ্ছে না, আইনজীবীদেরকে মামলার নকল কপিও সরবরাহ করছে না পুলিশ। থানা থেকে আদালতে এজাহার পাঠানোর পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক তা তালাবদ্ধ করে রাখছেন, যা সম্পূর্ণরূপে বেআইনী। কারণ এর মাধ্যমে আসামিদের আইনী লড়াইয়ে প্রাপ্য অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি দলের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে গায়েবী ও অসত্য মামলা দায়েরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিলাভের পরও শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: হযরত আলীকে বারবার জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গতকালকেও তাকে জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তাকে মোট ৮ বার জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। আমি দলের পক্ষ থেকে তাকে বারবার জেলগেট থেকে গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে হযরত আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।