২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত:বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া দ্রুত ত্বরান্বিত করতে ফখরুলকে দায়িত্ব: ঐক্য প্রক্রিয়ায় জামায়াত বাধা হবে না

স্টাফ রিপোর্টার : ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব বিএনপি বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাতটায় রাজধানীর গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শুরু হয়ে চলে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দ্রুত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।ঐক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে জোটের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বৈঠকে জোট নেতারা বলেন, বর্তমান সরকারকে হটাতে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

‘জামায়াতকে না ছাড়লে বৃহত্তর ঐক্য হবে না’- কয়েকটি দলের এমন অবস্থান প্রসঙ্গে জোটের এক নেতা বৈঠকে জোট ও জামায়াতের বক্তব্য জানতে চান। এ সময় জামায়াতের প্রতিনিধি আবদুল হালিম বলেন- আমরা চাই, যে কোনো মূল্যে বৃহত্তর ঐক্য হোক। আমাদের দলের অবস্থান হল- এ সরকারকে দ্রুত হটাতে হবে।

বৈঠকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার বিষয়ে জোট নেতাদের অবহিত করা হয়। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে বিএনপি জনসভা করতে চায়। বিএনপির জনসমর্থন নেই বলে সরকার যে দাবি করে আসছে, সেই চ্যালেঞ্জ নিতেই এককভাবে বিএনপি জনসভা করার চিন্তা করছে। জনসভায় ব্যাপক লোক-সমাগমের মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে বিএনপির জনসমর্থন কমেনি বরং বেড়েছে।

এছাড়া বৈঠকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব ইস্যুতে জোট নেতাদের মতামত নেয়া হয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, ইসি পুনর্গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় ঐক্যের পক্ষে তারা মত দেন। আগামীতে সরকারবিরোধী কি ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় সে ব্যাপারে শরিকদের মতামত জানাতে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি

বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. মুহাম্মদ ইবরাহীম, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, অপর অংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে ওলামা ইসলামের একাংশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, অপর অংশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান (এনডিপি) মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাঈদ আহমেদ।

জামায়াত ইতিবাচক

২০ দলীয় জোটের বৈঠকে ইতিবাচক ছিল জামায়াত। শরিক দলের একাধিক নেতার ভাষ্য, আগের চেয়ে জামায়াতকে অনেক পরিবর্তিত দেখা গেছে। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্য সফল করতে যে কোনও ছাড় দিতেও প্রস্তুতি আছে দলটির। জোটের বৈঠকে দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম জোটের ঐক্য ধরে রাখার পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘ঐক্য হওয়ার জন্য জামায়াতকে না রাখলেও চলবে।’
আবদুল হালিম এও বলেছেন, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ সরকারের পতনের জন্য যারা যারা কাজ করবে, তাদের ঐক্যে জামায়াতের সমর্থন আছে। যেহেতু কমন ইস্যুতে সবাই কথা বলছে, সেহেতু ঐক্য প্রক্রিয়ায় জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও ঐক্য গড়ে তুলতে মত দেন তিনি।
গত কয়েকদিন আগে জাতীয়তাবাদী ঘরানার একজন বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টিও আজ আলোচনায় আসে। ওই দুই নেতা সেই বুদ্ধিজীবীকে জানিয়েছেন, জামায়াত বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বাধা হবে না। জামায়াতকে বাদ দিয়েই বিএনপি ঐক্য প্রক্রিয়াকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ঐক্য প্রক্রিয়ার জন্য জামায়াত যে কোনও ছাড় দিতেও প্রস্তুত বলে জানানো হয় এই বুদ্ধিজীবীকে।

তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
কর্মসূচি
এদিকে, জোটের বৈঠকে আগামী দিনের কমর্সূচি নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে চিন্তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির তরফে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যত কমর্সূচি নিয়ে আপনারা ভেবে জানাবেন, কী ধরনের কমর্সূচি দেওয়া যেতে পারে।
আহমদ আবদুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তার ধরন নিয়ে চিন্তা করতে আমাদের বলা হয়েছে।

জানা গেছে, কমর্সূচি প্রণয়নে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে সবিস্তারে। এজন্য শরিকদলগুলোকে প্রস্তাব তৈরির জন্য বলা হয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।