ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া ৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা ॥ তিন দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়া পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই এর আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে যাওয়া আসামীরা হলেন-টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাধাই এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাফিউল আলম ও তার ছোট ভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আবুল হায়াত, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার পশুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ এবং মোশাররফ হোসেন খান।

আর ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া এলাকার ডগাইর ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোশারফ হোসাইন মায়াজকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন কিশোর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক নূরুল আমীন বিপ্লব। সেখানে এক প্রবেশন কর্মকর্তাকে মায়াজকে ২ দিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত।

আসামীদের মধ্যে শাফিউল আলম ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি, মায়াজ ও মোশাররফ শিবিরের কর্মী, অপর তিন আসামী শিবিরের সাথী বলে দাবি পুলিশের।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম আসামীদের আদালতে হাজির করে রাজধানীর ওয়ারী থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামীপক্ষে আব্দুর রেজ্জাক, লুৎফর রহমান, আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিনের আবেদন করেন। তারা বলেন, ১৬ দিন আগে তাদের তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়। এতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তাদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করছি।

শুনানি শেষে আদালত ৫ আসামীর জামিন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। আর মায়াজ কিশোর হওয়ায় তার বিষয়ে শুনানির জন্য কিশোর আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর কিশোর আদালত মায়াজের পক্ষে ওই আদেশ দেন।

২৬ সেপ্টেম্বর রাতে ওয়ারী থানাধীন ২২ নং বনোগ্রাম লেন এর ৬ষ্ঠ তলা বাড়ির নীচ তলার রুমের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্রশিবিরের গোপন বৈঠকের সময় বিস্ফোরক দ্রব্যসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশের দাবি।

এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলন করে নিখোঁজের স্বজনেরা সংবাদ সম্মেলনে স্বজনদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে শাফিউল আলম ও মনিরুল ইসলামের মা রমিছা খানম বলেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর রাতে আমাদের পাঁচ সন্তানকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেছে। ওই দিন পবিত্র হজ পালন শেষে আমি ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফেরার জন্য একটি মাইক্রোবাসে উঠি। ঠিক তখনই একদল অপরিচিত লোক আমার দুই ছেলেকে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য টানা-হেঁচড়া শুরু করে। তখন আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ওরা তাদের পরিচয়পত্র ও অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে। আমি তখন আমার ছেলেদের কী অপরাধ জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু তারা কিছু না বলে আমার চোখের সামনে থেকে আমার দুই ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা আমার ছেলের বন্ধু মো. আবুল হায়াতকেও তারা তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই রাতেই ডিবি পরিচয়দানকারীরা আমার ছেলে শাফিউলকে নিয়ে গভীর রাতে তার বাসায় যায়। সেখান থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা শাফিউলের বন্ধু অপর দুই রুমমেট শাফিউল্লাহ ও মোশারফ হোসাইন মায়াজকে তুলে নিয়ে যায়।’

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।