ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুকিতে কলারোয়া পৌরসভার ৪০ হাজার মানুষ !

ক্রাইমবার্তা  রির্পোটঃ  মনি: কলারোয়া পৌরসভায় সুপেয় পানির সংকট ও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঝুকির মধ্যে পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। সুপেয় পানির দাবিতে গত কয়েক বছর যাবত পৌরবাসী দাবি জানালেও গত ২৮ বছর ধরে প্রশাসনসহ পৌরপিতারা আর্সেনিক ঝুকি থেকে মুক্ত করতে পারেনি। এসব প্রতিনিধিরা পৌরবাসীকে শুধু নির্বাচনী আশ্বাসের বাণীতে সীমাবদ্ধ রেখেছে।
খোজনিয়ে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে কলারোয়ায় পৌরসভা স্থাপিত হয়। সে সময় সীমানা সংক্রান্ত জটিলায় উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হলে তা ২১ বছর পর নিস্পত্তি হয়। এ সময়টিতে পৌরসভায় নির্বাচন না হওয়ায় মরহুম আজিজুল হক চৌধুরী (জাতীয়পার্টির নেতা) দীর্ঘদিন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় কলারোয়া পৌরবাসী কোন নাগরিক সুবিধা পায়নি। উচ্চ আদালতের মামলা নিষ্পত্তির পর ২০০১ সালে জানুয়ারি মাসে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। এসময় তিনিসহ জয়ী ওয়ার্ড কমিশনাররাও ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুকিতে থাকা পৌরবাসিকে মুক্তি দিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। তবে তাদের এ কার্যক্রম আজও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
কলারোয়ার বেসকারি উন্নয়ন সংস্থা জেস ফাউন্ডেশন (এনজিও) অফিস সুত্র জানায়, গত ২০০৪ সালে ‘জেস ফাউন্ডেশন’ পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে বগুড়র আরডিএ’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। সে মোতাবেক বগুড়ার রুরাল ডেভলপমেন্ট একাডেমি (আরডিএ) এর অর্থ সহযোগিতায় পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ১৮ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজও শুরু করে। এ প্রকল্পের জন্য পৌরসভার ট্রাক টার্মিনালের পাশে পানির হাউজ-প্ল্যান্ট নির্মাণ ও সেখান থেকে তুলসীডাঙ্গা ফুড গোডাউন পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। একটি হাউজ-ট্যাঙ্ক ও সামান্য পাইপ লাইনের কাজ করেই ১৮ লাখ টাকার বাজেট শেষ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্প। পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পটি আবারও চালু করার জন্য ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র আহ্বান করে সংবাদ পত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪০৮ টাকা। এ কাজ শেষে পরীক্ষামূলকভাবে পানিও উত্তোলন করা হয়। কিন্তু তাতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় পানি তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়। আরডিএ’র সঙ্গে চুক্তির শর্তানুযায়ী জেস ফাউন্ডেশন পানি সরবরাহ করবে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। এসময় গৃহীত নানা পরিকল্পনা, লাভ-ক্ষতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বেড়াজালে আটকা পড়ে জনগুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি। ফলে প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় পৌর এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ভয়াবহ আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে কতজন যে আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই।
কলারোয়া পৌরসদরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম লাল্টু, ব্যাবসায়ী রাজু, পত্রিকা এজেন্ট আলহাজ্ব রেজাউল ইসলামসহ আরো অনেকে পত্রদূতকে জানান, পৌরসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সকলেই নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পানীয় জলের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে জয়ী হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর প্রতীক্ষায় থাকার পরও সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে ৪০ হাজার পৌরবাসীকে। এছাড়া পৌরসদরের মধ্যে ড্রেনেজ ব্যব¯’া, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। সুপেয় পানি সংকট ও আর্সেনিক থেকে মুক্তির জন্য তারা অবিলম্বে বন্ধ থাকা জনগুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি জানান।
কলারোয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, পানি সরবরাহ প্রকল্পটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পটি চালুকরণের জন্য বেসরকারী সংস্থার সাথে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পৌরকতৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।