‘ভারতে নামাজের জন্য মসজিদ অপরিহার্য কিনা তা আদালত কিভাবে ঠিক করে?’

ক্রাইমবার্তা রির্পোটঃ

ভারতের মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি বলেছেন, নামাজের জন্য মসজিদ প্রয়োজন কিনা তা আদালত কিভাবে ঠিক করতে পারে? গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে, ‘নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়।’ ওয়াইসি সেই প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন।

ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, যদি বিষয়টি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হতো তাহলে ভালো হতো। কারণ, ইসলামে মসজিদ একটি জরুরি অংশ। কুরআন ও হাদীসে মসজিদের উল্লেখ আছে। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছে। এরআগে ‘ট্রিপল তালাক’ ইস্যুতে বিচারপতি কুরিয়েন বলেছিলেন, ট্রিপল তালাকের বিষয়টি কুরআনে নেই। দুঃখজনক বিষয় হল, যখন ট্রিপল তালাকের বিষয় সামনে এল তখন কুরআনের উল্লেখ করা হল কিন্তু যখন মসজিদের বিষয়টি সামনে এল তখন কুরআনকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে!’

ওয়াইসি বলেন, অন্য ধর্মের ধর্মস্থান কী প্রয়োজনীয় নয়? ধর্মীয় বিষয়ে আদালত কীভাবে ঠিক করতে পারে কোনটা জরুরি? এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ধর্মীয়গুরুদের রয়েছে।’

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাপেক্ষে ইসমাইল ফারুকি মামলায় ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সরকার মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবই অধিগ্রহণ করতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট ধর্মে তার আলাদা কোনো তাৎপর্য না থাকে। মসজিদ ইসলামের অপরিহার্য অংশ নয়। কারণ, নামাজ যে কোনো জায়গাতেই পড়া যেতে পারে। মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহত্তর বেঞ্চ গড়ে ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানানো হয়।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এ সংক্রান্ত মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর দাবি খারিজ করে দিয়ে আগেকার ওই পুরোনো রায়ই বহাল রেখেছে। তিন সদস্যের বিচারপতির সমন্বিত বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি অশোক ভূষণ ওই রায় দিলেও বিচারপতি এস আব্দুল নাজির ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি মনে করেন, মসজিদ নামাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কী না তা বিচারের জন্য পাঁচ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে ‘অল ইন্ডিয়া সুন্নত অল জামাআত’-এর সাধারণ সম্পাদক, মুফতি আব্দুল মাতীন বলেন, ‘যে বিচারপতিই বলুন না কেন, তার সম্পর্কে একথা বলব যে, কুরআন শরীফ নিয়ে এবং ফেকাহ শাস্ত্র নিয়ে তিনি পড়াশোনা করুন। কারণ, নামাজের সঙ্গে মসজিদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। জুমার নামাজ মসজিদ ছাড়া কখনো হয় না।’

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘ওই রায়ে কোথাও মসজিদের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়নি। আমরা প্লাটফর্মে নামাজ পড়তে পারি, স্টেশনে নামাজ পড়তে পারি, প্রয়োজনে সড়কের ওপরেও নামাজ পড়তে পারি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে এগুলোর বৈধতা পাওয়া গেল যে আমরা মসজিদ ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় নামাজ পড়তে পারি।’

এ প্রসঙ্গে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘কেবলমাত্র নামাজ পড়া নয়, নামায প্রতিষ্ঠা করা ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। প্রত্যেক মুসলিমের অপরিহার্য কর্তব্য হল, ‘নামাজ কায়েম’ করা, নামাজের জামাত প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্যই মসজিদ মুসলিম সমাজের অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। মসজিদ ছাড়া দিনে পাঁচবার নামাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং অপরিহার্যভাবে শুক্রবারের জুমার নামাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানে সব সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার দেয়া হয়েছে। সুতরাং, সুপ্রিম কোর্ট নামাজের জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয় বলে যে মন্তব্য করেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক!

‘মসজিদে নামাজ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ওই মন্তব্য কাম্য নয় এবং সংবিধানের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলেও মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মন্তব্য করেন।

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম 

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।