যে কারণে মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে শেষ ওভার

স্পোর্টস রিপোর্টার:

এশিয়া কাপ ফাইনালটা কোথায় হারল বাংলাদেশ?

স্কোরকার্ড বলবে, শেষ ওভারে। কিন্তু আসলে কি আর শেষ ওভারে? শেষ ওভার যখন শুরু হচ্ছে, তখন তো ভারতই ফেবারিট। জিততে লাগে মাত্র ৬ রান, সেটি কি আর ঠেকানো যায় নাকি!
কেন, ঠেকানো কি একেবারেই অসম্ভব? এই টুর্নামেন্টের স্মৃতিই কি অন্য কথা বলছে না! আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচটা জিততে শেষ ওভারে ৮ রান লাগত আফগানদের। মোস্তাফিজুর রহমান দিয়েছিলেন মাত্র ৪ রান। ফাইনালে এটি করতে পারলেই তো হয়ে যেত। মোস্তাফিজুর তাহলে কেন শেষ ওভারটা করলেন না?

সমস্যা হলো, এখানে শেষ ওভারের জন্য মোস্তাফিজকে রেখে দিতে গেলে ম্যাচটা আরও আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। হয়তো শেষ ওভার পর্যন্ত আসতই না। শেষ ২ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১১ রানের। এক ওভারেই খেলা শেষ হয়ে যেতে পারে। মাশরাফি তাই ৪৯ তম ওভারটা করতেই বল তুলে দিলেন মোস্তাফিজের হাতে। মোস্তাফিজ ৩ রান দিলেন, উইকেটও নিলেন ১ টি। তাতে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলাটা বেঁচে থাকল। পরে তো দেখা গেল শেষ বল পর্যন্তও।

কিন্তু শেষ ওভারটা যে করতে হলো মাহমুদউল্লাহকে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সৌম্য সরকারের কথা। বল হাতেও নিয়েছিলেন সৌম্য। পরে মাশরাফি মত বদলে মাহমুদউল্লাহকে ডাকেন। সৌম্য-মাহমুদউল্লাহ কেউই নিয়মিত বোলার নন। নিয়মিত বোলারদের মধ্যে মোস্তাফিজ, রুবেল ও নাজমুলের কোটা তখন শেষ। শেষ মাশরাফিরও। ওভার ছিল শুধু মেহেদী হাসান মিরাজের। এই ম্যাচেই যিনি বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাটিং ও বোলিং দুটিই ওপেন করার প্রথম কীর্তি গড়েছেন। মিরাজের কথা কেন ভাবলেন না মাশরাফি?
৪ ওভারে ২৭ রান দিয়েছেন বললে যা বোঝায়, মিরাজ আসলে এর চেয়েও খারাপ বোলিং করেছেন এ দিন। যে কারণে মাশরাফি আর শেষ ওভারে আনার সাহস পাননি। শুধু মিরাজ নন, দলের তিন স্পিনারের কাছ থেকেই আরেকটু বেশি আশা করেছিলেন অধিনায়ক। সেটি না পাওয়ায় হতাশাটাও গোপন করলেন না। সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘প্রথম ইনিংসে বল যেভাবে স্পিন করেছে, তাতে আমাদের স্পিনারদের আরও আশা করেছিলাম। মিরাজ এই টুর্নামেন্টে সেরা বোলার, রিয়াদও (মাহমুদউল্লাহ) গত ম্যাচে খুব ভালো বোলিং করেছেন। আজ তারা আরেকটু ভালো করতে পারত।’
স্পিনাররা ভালো করেনি বলেই শেষের ওভারটা মোস্তাফিজ বা রুবেলকে দিয়ে করাতে পারেননি মাশরাফি, ‘ওদের যখন সাড়ে ৫ রান করে লাগে, তখন আমি মিরাজকে এনেছি। রিয়াদকে এনেছি। তখন কেউ যদি দুইটা ওভারও ভালো বোলিং করে দিত, তাহলে খুব ভালো হতো। একজন স্পিনার ভালো করলেও ৪৬ নম্বর ওভার থেকে আমি রুবেল ও মোস্তাফিজকে শেষ পর্যন্ত বোলিং করাতে পারতাম। তাহলে হয়তো ভারতের কাজটা অনেক কঠিন হতো। কারণ ওদের বোলিংয়ে অনেক ভ্যারিয়েশন আছে।’

ম্যাচটা হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বাধ্য হয়েই রুবেল ও মোস্তাফিজকে আগেই ব্যবহার করে ফেলতে হয়েছে। শেষ ওভারে যে কারণে আর তাঁদের কাউকে পেলেন না মাশরাফি। সৌম্যর কথা ভেবেও শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ কেন? কারণ হিসাবে বিপিএলে একাধিক ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর শেষ ওভারের বীরত্বের কথা বললেন মাশরাফি।
মাহমুদউল্লাহর হাতে বল তুলে দেওয়ার সময় কী বলেছিলেন তাঁকে? ‘রিয়াদকে বলছিলাম, ওরা মারতে যাবে। মারতে গেলে মিস হিট হতে পারে। বিশেষ করে কুলদীপ মারার চেষ্টা করবে। যাদব যেহেতু ব্যাটসম্যান, ও হয়তো তা করবে না। পঞ্চম বলটাই কিন্তু কুলদীপের ব্যাটে ইনসাইড এজ হয়েছিল। আসলে এ রকম পরিস্থিতিতে একটু লাক ফেবার করতে হয়।’

ভাগ্য কুলদীপ যাদবের পক্ষে থাকায় উল্টো ১টি রান হয়ে গিয়ে স্কোর সমান হয়ে গেল। শেষ বলটা তখন সুপার ওভারের সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে। এই এশিয়া কাপের বাইলজ অনুযায়ী ফাইনাল টাই হলে শিরোপার নিষ্পত্তি হতো সুপার ওভারেই। মাশরাফির সেটি জানা ছিল। শেষ বলটা নিয়ে বললেন, ‘ওই বলটা হয় ডট হতে হতো অথবা আউট। ও ইয়র্কারই করেছিল। কিন্তু বলটা প্যাডে পড়ে গেল। রিয়াদ ভালো করেছে। ওই অবস্থায়, মানে ৬ বলে ৬ রান লাগে, এই অবস্থায় ও ভালো ফাইট করেছে।’

স্পিনারদের কাছ থেকে আরেকটু বেশি আশা করলেও পুরো বোলিং ইউনিটকেই ‘ফাইট করা’র কৃতিত্বটা দিচ্ছেন মাশরাফি। ২২২ রানের পুঁজি নিয়ে ভারতের মতো দলের বিপক্ষে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করার পর তা দেওয়ারই কথা। ম্যাচটাও বাংলাদেশ শেষ ওভারে হারেনি। হেরেছে অনেক আগেই। যখন আগের ম্যাচগুলোতে দলকে উদ্ধার করা মিডল অর্ডারের সুসময়ের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেছে।
এরপরও যে ম্যাচটা শেষ ওভার, শেষ বল পর্যন্ত গেছে, এটাই তো বেশি!

Check Also

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনা ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম 

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্যদের নিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।