জনসভা থেকে আড়াইশ নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে : বিএনপি

ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট:  রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা হওয়ার সময় মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তা থেকে আড়াই শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার জনসমাগম দেখলেই আঁতকে উঠছে। কারণ তাদের পায়ের নীচের শেষ মাটিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

তিনি বলেন, ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামী সরকার পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এবারে তারা আর জনগণের অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বর্তমান স্বৈরাচারী শাসকদের পতন ঘটাতে জনগণ এখন আরও বেশী ঐক্যবদ্ধ।

বিবৃতিতে জানানো হয়- জনসভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমানকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানা গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হারুন, ওয়ারী থানা বিএনপি নেতা লিঠু, নিউমার্কেট থানা বিএনপি নেতা জসিম, আলমগীর, মোয়াজ্জেম, নওগাঁ জেলাধীন বদলগাছি থানা যুবদল নেতা জহিরুল ইসলাম, পাবনা জেলাধীন সাথিয়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সামসুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি নেতা মনি পাহিনী, হৃদয়, সম্রাট পাহিনীসহ ১০ জন, নোয়াখালী সূবর্ণচর বিএনপি নেতা ও ঢাকাস্থ সূর্বণচর জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি এম এ কালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসাস এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ এনাম মুন্না, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবুল কালাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসান লিটু, নাঙ্গলকোট থানা ছাত্রদলের সদস্য আহসান মজুমদার নিশাত, যুবদল নেতা ইসমাইল মজুমদার, মোঃ শিহাব খন্দকার, বটতলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইয়াসিন আলী, সহ-সভাপতি মনছুর আহম্মদ ভুঁঞা, জোড্ডা ইউনিয়ন যুবদল নেতা মোঃ ছাদেক, ছাত্রদল নেতা মোঃ ওমর ফারুক খোকন, বটতলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন সুমনসহ প্রায় আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল মিথ্যা মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে হাজির দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

আরো পড়ুন : সমাবেশ থেকে যে ৭ দফা আর ১২ লক্ষ্যের কথা জানাল বিএনপি 
নয়া দিগন্ত অনলাইন ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৫৪

রোববার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা থেকে ৭ দফা, ১২ লক্ষ্য ও ২ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষে দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দলীয় চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি রয়েছে ঘোষিত সাত দফায়।

এ দফা ও দাবি বাস্তবায়নে আগামী ৩রা অক্টোবর জেলায় এবং ৪ঠা অক্টোবর বিভাগীয় শহরে সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, সরকার যদি দাবি মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। খালেদা জিয়ার ডাকে দেশবাসী এবং সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ভীষণ ভয় পাচ্ছে। তারা এখন পদে পদে ষড়যন্ত্রের ভুত দেখতে শুরু করেছে।

৭ দফা দাবি:

১. (ক) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে (খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। (গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা। (ঘ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবেনা । (ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে গ্রেপ্তর ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

২. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে।

৩. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

৪. আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।

৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোন ধরনের বিধি নিষেধ আরোপ না করা।

৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা। নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে।

১২ লক্ষ্য:

দাবি পেশের পাশপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কী কী করবে সে বিষয়ে ১২ টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো হল-

১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

২. সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন।

৩. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

৪. রাষ্ট্রক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

৫. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৬. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা।

৭. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৮. দুর্নীতি প্রতিরোধে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে সংস্কার ও কার্যকর করা।

৯. সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা।

১০. সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এ মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১১. কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদকে মদদ না দেয়া এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না দেয়া।

১২. সর্বনিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবন নিশ্চিত করে, আয়ের বৈষম্যের অবসানকল্পে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ এবং শ্রমজীবী জনগণের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা। সারাদেশে বিদুৎ ও জালানী নিশ্চিত করা। স্নাতক ও সমমান পর্যন্ত শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধূরী এ্যানীর সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ,ব্যারিষ্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান।

ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদিন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবেদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবীব, ফজলুর রহমান, হবিবুল ইসলাম হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক, ফজলুল হক মিলন, মাহবুবুর রহমান শাহীন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস আকতার, শামা ওবায়েদ প্রমুখ।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।