ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোর্ট: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ বইটি নিয়ে উনি (শেখ হাসিনা) কেন এত ভয় পাচ্ছেন, এটা তো আত্মজীবণীমূলক একটি বই।’
বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘আসলে স্বৈরশাসনে যারা মনোনিবেশ করেন, হিটলারের ইতিহাস যদি দেখেন, তার গোয়েন্দারা মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করত। সরকারের যেসব বাহিনী এখন আছে, তাদের কথাই এখন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) মুখে ফুটে ওঠে। উনি (শেখ হাসিনা) কেন এত ভয় পাচ্ছেন, এটা তো আত্মজীবণীমূলক একটি বই।’
বইটি প্রকাশের পেছনে অনেকের ইন্ধন, উদ্যোগ এবং সাহায্যের যে কথা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারপতি সিনহা।
সিনহা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি জানেন, তাহলে তা প্রকাশ কেন করছেন না? সাংবাদিকদের তা বের করতে বলছেন কেন?’
বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর রায় লেখা নিয়েও আমাকে একই ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। তারা কখনো বলেছে আইএসআই এই রায় লিখে দিয়েছে, কখনো বলেছে ড. কামাল হোসেন লিখে দিয়েছেন। আবারো এখন এই বই নিয়ে একই প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘বইটি আমি নিজে লিখে নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করেছি, এতে অন্য কারো কোনো ইন্ধন নেই। বইটিতে আমার ব্যক্তিগত সব অভিজ্ঞতা লিখেছি, যেটা অন্য কারো পক্ষে লিখে দেয়া সম্ভব নয়। বইটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে, মুখবন্ধে আমি তার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি। অন্য কেউ যদি এডিট করে দিত, তাহলে এই ভুলগুলো থাকত না।’
এদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়ে শনিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি সিনহা জানান, দেশে তার জীবনের ঝুঁকির কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
রোববার টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিবিসির কাছে তার রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি এই আশ্রয় চেয়েছেন।
সিনহা বলেন, ‘আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়াটা আমাদের দেশে, সরকার এবং মূল্যবোধের জন্য একটা প্রশ্ন…কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে?’
কেন তিনি মনে করছেন দেশে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে? এমন প্রশ্নে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘জঙ্গিবিষয়ক বিভিন্ন মামলার রায় দেয়া নিয়ে একদিকে ধর্মীয় জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি এবং অন্যদিকে সেনা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে তাকে বিদেশে আশ্রয় চাইতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে মারার জন্য জঙ্গিরা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। আমার গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে…আমার দুটো কুকুর পর্যন্ত তারা মেরে ফেলেছিল…। অন্যদিকে সরকার আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে, ডিজিএফআই আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে।’
বিচারপতি সিনহা সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে বিভ্রান্ত করেছে, ভুল বুঝিয়েছে।’
একইসঙ্গে গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে শেখ হাসিনার নানা ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সিনহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র আনতে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য লড়াই করেছিল, কেয়ারটেকারের মধ্য দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই তিনি (শেখ হাসিনা) সুর পাল্টে ফেলেন।’
দেশে যখন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় এতদিন পর তিনি কেন এই বই প্রকাশ করলেন? এমন প্রশ্নে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতিতে কে জিতল, কে হারল তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকার আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছে, আমি শুধু তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। যখন শেষ করতে পেরেছি তখন প্রকাশ করেছি। এতে বিরোধী দল যদি কোনো সুবিধা পেয়ে থাকে, তাতে আমার কী লাভ?’
তিনি বলেন, তারা (সরকার) এত ভয় পাচ্ছে কেন? তারা তো উন্নয়ন করেছে। দেশের অর্থনীতি ভালো, আমি নিজেও তা স্বীকার করি। তাহলে আমার একটা বই নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে কেন? তাহলে তারা যে দুর্নীতি করেছে সেটা কি উন্নয়নকে ছাপিয়ে যাবে? এই কারণেই কি তারা ভয় পাচ্ছে?’- এমন প্রশ্ন ছুড়েন বিচারপতি সিনহা। সূত্র: বিবিসি বাংলা