ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট:খুলনা:নগরীর সদর থানাধীন শামসুর রহমান রোডে বসতি রিয়েল এস্টেট এর একটি বহুতল ভবন নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেডিএ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্মাণের কাজ বন্ধসহ অপসারণ করার জন্য ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এদিকে ঐ ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত মতি মসজিদের সীমানা প্রাচীর থেকে দুই মিটার জায়গা বাদ দিয়ে ভবন নির্মাণের শর্ত থাকলেও তা না করে উপরন্ত প্রাচীরের সাথে সিড়ি নির্মাণ করায় মুসল্লীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে আবার তাদের শ্রমিকরা মসজিদের প্রধান ফটকে টাইলস দিয়ে লাগানো ‘কাবা’ শরীফের ছবিটি ভেঙে ফেলায় মুসল্লীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে এলাকাবাসী।
কেডিএ গত ২৭ সেপ্টেম্বর ৫১ শামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা মো. জাফর ইমাম ও অন্যান্য এর পক্ষে আমমোক্তার বসতি রিয়েল এস্টেট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শাহনেওয়াজ বাপ্পীকে ন-৭৬১/২০১৫-২০১৮ স্বারকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। উক্ত নোটিশে কেডিএর অথরাইজড অফিসার শামীম জিহাদ স্বাক্ষর করেছেন। তিনি নোটিশে উল্লেখ করেছেন-অনুমোদিত নকশার অনুমতিপত্রের ৭নং শর্ত অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শুরু করার পূর্বে অথরাইজড অফিসারকে লিখিতভাবে অবগত করাতে হবে মর্মে শর্ত থাকলেও আপনি উহা ভঙ্গ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, অনুমোদিত নকশায় ভবনের উত্তর পার্শ্বে ২ মিটার জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে শুন্য দশমিক ৬০ মিটার জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করছেন। অনুমোদিত নকশায় ভবনের পূর্ব পার্শ্বে ১ দশমিক ২৫ মিটার জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে শুন্য দশমিক ৬৫ মিটার জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করছেন। অতএব উক্ত খেলাপী নির্মাণ কাজ করার জন্য ১৯৫২ সালের সংশোধিত ইমারত আইন (১৯৮৭ সালের ১২ নং আইন) এর ৯ ধারা মোতাবেক আপনার নকশা কেন বাতিল করা হবে না এবং উক্ত আইনের ধারা অনুযায়ী কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না অত্র স্মারক প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর জন্য আপনাকে বলা হলো এবং নির্মাণ কাজ বন্ধসহ অপসারণ করার জন্যও বলা হলো।
এদিকে মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে নগরীর স্যার ইকবাল রোডের বাসিন্দা মৃত আব্দুল করিমের হেলাতলা মৌজার ৩৭৮ নং দাগের সাড়ে ৫ শতক জমির উপর মসজিদের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে মৃত ফাতেমা খাতুন একই মৌজার ৩৭৭ ও ৩৭৮ দাগের আরো এক শতক জমি দান করেন। যেটি বর্তমানে ওযুখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরদিকে মসজিদের পূর্ব দিকের বাসিন্দা মৃত জহুরুল হক দশমিক ৭৩ শতক জমি মসজিদের নামে দান করেন। যেটি মসজিদের বার্থরুম নির্মাণ করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৭ দশমিক ২৩ শতক জমির উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। এ মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৯৭৬ সালে। এরপর থেকে ভালোভাবেই মসজিদের সকল কাজ পরিচালনা হয়ে আসছিল। সম্প্রতি মো, জাফর ইমাম ও ইকবাল ইমামের জমি নিয়ে বসতি রিয়েল এস্টেট মসজিদের প্রাচীরের সাথে ভবনের সিড়ি নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে মসজিদের মুসল্লীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মসজিদ কমিটি একাধিকবার বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কেডিএতে অভিযোগ দেয়া হয়। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেডিএ বসতি রিয়েল এস্টেটসহ সংশ্লিষ্টদের ৭ দিনের কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। যা আগামী পরশুদিন শেষ হচ্ছে।
বিক্ষুব্ধ মুসল্লীরা জানান, মসজিদ একটি পবিত্র স্থান। তার প্রাচীরের সাথে একটি বহুতল আবাসিক ভবনের সিড়ি নির্মাণ হচ্ছে। এতে করে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ভবনের ফ্লাট সকল ধর্মের মানুষের কাছে বিক্রি করবে। এখানে আযান ও নামাযের সময় অন্য ধর্মালম্বীরা তাদের পূজা অর্চনা করাকালে মুসল্লীদের সমস্যা হবার আশংকা রয়েছে। বিধায় মসজিদের প্রাচীর থেকে কেডিএর নোটিশ অনুযায়ী দুই মিটার জায়গা ছেড়ে দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করলে তাতে মুসল্লীদের কোন আপত্তি থাকবে না। আর তা না হলে তারা এর জন্য সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানান। এ ছাড়া এর জন্য যদি বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনা ঘটে তার জন্য বসতি রিয়েল এস্টেট কর্তৃপক্ষ দায়ি থাকবে বলে মুসল্লীরা জানান।
বসতি রিয়েল এস্টেট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শাহনেওয়াজ বাপ্পী বলেন, নোটিশ পেয়েছি। আমরা মসজিদ কমিটির সাথে বসে খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান করে ফেলবো। ‘কাবা’ শরীফের ছবি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, পরে সেটি আমরা আবার লাগিয়ে দিয়েছি। তবে, এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য জমির মালিক মো. জাফর ইমামের সাথে যোগাযোগ করা চেষ্ঠা করলেও মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। অপর মালিক ইকবাল ইমাম বসতি রিয়েল এস্টেট এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আপনি তো সবই জানেন। আপনার সাথে বসে সব ফয়সালা করবো।
এ ব্যাপারে কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার শামীম জিহাদ বলেন, আমরা বসতি রিয়েল এস্টেটসহ অন্যান্যদের নোটিশ করেছি। নোটিশের জবাব পাওয়ার পরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা কোন ছাড় দেব না। আইন অনুযায়ীই কাজ হবে।#
Check Also
৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …