ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প সুনামিতে নিহত ১,৩০০ ছাড়ালো

রয়টার্স, জাকার্তা পোস্ট : ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১,৩৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে মৃতের সংখ্যা ৮৪৪ জন বলে জানানো হয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামি ছয় মিটার উঁচু ঢেউ নিয়ে সুলাওয়েসির পশ্চিম উপকূলের পালু শহরে আঘাত হানে। জোড়া এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বহু লোক প্রাণ হারায়। এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগ্রোহো বলেছেন, “দুপুর ১টা পর্যন্ত ১,২৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।”

মঙ্গলবার পালুর নিকটবর্তী সিগি বিরোমারুতে একটি গির্জায় কাদার স্রোতের নিচে চাপা পড়া ৩৪ ইন্দোনেশীয় শিক্ষার্থীর লাশ পাওয়া যায়।

এরা সবাই জনোগি গির্জার বাইবেল ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ বলে কথিত ৮৬ শিক্ষার্থীর একটি দলের সদস্য। এদের মধ্যে বাকি ৫২ শিক্ষার্থীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। নিহত শিক্ষার্থীদের পরিচয় ও তাদের বয়স শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ইন্দোনেশীয় রেডক্রসের এক কর্মকর্তা।

ধসে পড়া রোয়া রোয়া হোটেলের ভিতরে প্রায় ৫০ লোক ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এদের মধ্যে মাত্র তিন জন জীবিত অবস্থায় বের হয়ে আসতে পেরেছেন। ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু বাকিদের কোনো খোঁজ নেই।   উদ্ধারকারীরা এখনও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছতে পারেননি। তারা ওই এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর পর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অনেক জীবিত এখনও ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপ পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্প ও সুনামির ধ্বংসযজ্ঞের পর পালুর লোকজন ত্রাণের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। শহরটিতে পানি, খাবার ও জ্বালানির অভাব দেখা দিয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় এসব সরবরাহ শহরটি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

পালুর সমস্ত সাধারণ নাগরিক সুবিধা ভেঙে পড়ায় বাসিন্দারা জ্বালানি, খাবার পানি ও খ্যাদের খোঁজে হন্যে হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা অক্ষত দোকানগুলোর সামনে ভিড় করায় লুটপাটের আশঙ্কায় সেখানে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পালুতে অবস্থান করা বিবিসির প্রতিনিধি জোনাথন হেড ছোট একটি দোকান থেকে মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টারত জনতাকে সতর্ক করতে পুলিশকে ফাঁকা গুলি করতে দেখেছেন।

একটি দোকানের সামনে ভিড় বাড়তে থাকায় পুলিশ চিৎকার করে সবাইকে পেছনে সরে যেতে বলে, এরপর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। জনতার মধ্যে কয়েকজন পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। পরে পুলিশ জনতাকে ওই দোকানে প্রবেশ করে খাদ্যপণ্য নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়। তবে খাবারের বাইরে অন্যান্য পণ্য যেন না নিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখে বলে জানিয়েছেন বিবিসির প্রতিনিধি।

পালুতে অবতরণের অনুমতি পাচ্ছে না বিশেষ ত্রাণবাহী বিমান

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প ও সুনামিতে বিধ্বস্ত পালু শহরের মুতিয়ারা সিস আল-জুফরি বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি পাচ্ছে না বিদেশি ত্রাণবাহী বিমান। কর্মকর্তারা জানান, ত্রাণ নিয়ে বিদেশি বিমানগুলো অবতরণের অনুমতি চাইতে তা দেওয়া হচ্ছে না।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিমানবন্দর পরিচালক পোলানা প্রমেস্টি গত সোমবার বলেন, অনেকগুলো বিদেশি এয়ারলাইন্স তাদের উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের অনুমতি দেইনি। কারণ বিমানবন্দরটি এখনও স্পর্শকাতর এলাকা। তিনি ফ্রান্স এয়ারলাইনকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে উদাহরণ দেন।

ইন্দোনেশীয় এই কর্মকর্তা দাবি করেন, প্রয়োজনীয় ত্রাণ কাজের জন্য সবধরনের পরিবহনের কাজ করার সামর্থ্য রয়েছে ইন্দোনেশিয়ান এয়ারলাইন্সে। শুক্রবার ভূমিকম্পের পর অন্তত চারটি স্থানীয় এয়ারলাইন্স কোম্পানি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর হারকিউলিস হেলিকপ্টারও কাজ করছে।

পোলানা বলেন, এ পর্যন্ত ছয়টি হারকিউলিস হেলিকপ্টার রিটার্ন ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। যদিও স্থানীয় এয়ারলাইন্সের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কারণ ত্রাণ সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং বিদেশি ত্রাণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই অব্যাহত থাকবে।

দেশটির জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরয়ো জানান, সরকার অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, চীন, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ফিলিপাইন ও সুইজারল্যান্ডকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

গত সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া ১ মিলিয়ন ডলার, ইইউ ১.৬ মিলিয়ন এবং চীন ২ লাখ। সুতোপো জানান,  বিদেশি ত্রাণ গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র প্রেসিডেন্টের রয়েছে।

Check Also

গাজায় আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজা ভূখণ্ডে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।