ক্রাইমর্বাতা রিপোট:বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আগে তিন ইস্যুতে ফয়সালা চান যুক্তফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণ দেয়া, ক্ষমতায় গিয়ে ভারসাম্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং অতীতের মতো দুর্নীতি-দুঃশাসনকে প্রশ্রয় না দেয়া- এই তিন বিষয়ে বিএনপির কাছে লিখিত অঙ্গীকার চান তারা।
মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের নেতারা এ অঙ্গীকারের কথা বলেন। যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ দাবিগুলো বৈঠকে তুলে ধরে। বিষয়টি নিয়ে দূতিয়ালি করার জন্য বৈঠক থেকে যুক্তফ্রন্টের আরেক শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তার ছেলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী প্রথম থেকেই বলে আসছেন, জামায়াত থাকলে তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করবেন না। তারা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চান বিএনপির কাছ থেকে।
মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বাসায় যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বসেন। বি. চৌধুরী ছাড়াও এই বৈঠকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে যুক্তফ্রন্টের ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করার পাশাপাশি আগামী দিনের কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়টি উঠে আসে। বি. চৌধুরী জামায়াত ইস্যুতে তাদের অবস্থানের বিষয়টি সবাইকে অবহিত করে বলেন, তিনটি ইস্যুতে আগেভাগে ফয়সালা হতে হবে। তা না হলে এই ঐক্য কোনো কাজে আসবে না। একটি সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে, আরেকটি সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে- জনগণ কোনো সুফল পাবে না। জনগণের শান্তি-সুখ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে বিএনপিকে সুনির্দিষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে হবে যে তারা অতীতের মতো একই ভুল ভবিষ্যতে করবে না। এ সময় যুক্তফ্রন্টের শরিক একটি দলের শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি কথা দিয়েছে তারা দেশের মানুষের জন্য যা ভালো হয়- সেই পথে হাঁটবে। জবাবে বি. চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে অনেকে অনেক কথা বলে। ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে যায়। তাই বিএনপির কাছ থেকে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার আদায় করতে হবে। পরে এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বৈঠকে চিকিৎসা শেষে ড. কামাল হোসেন দেশে ফেরার পর তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং যুক্তফ্রন্টের যৌথ সভা আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে বি. চৌধুরী বুধবার বলেন, আমরা ভোটের অধিকার রক্ষায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী কারও সঙ্গে ঐক্যে যাব না। একইভাবে আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য চাই। তা না হলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসক দল যা খুশি তাই করে। এটা বন্ধ করতে হলে ক্ষমতার ভারসাম্য খুবই জরুরি।
বর্তমান এবং অতীতের সরকারগুলোর সময় যেভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তা আর ভবিষ্যতে হবে না- এমন নিশ্চয়তাও থাকতে হবে। তা না হলে কাক্সিক্ষত সুফল আসবে না। জনগণেরও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বুধবার বলেন, ‘আমরা বৈঠকে নানা ইস্যুতে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য দলটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন।’
বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াসহ সমমনা দলগুলোকে এক কাতারে এনে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দে র প্রতিষ্ঠাতার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে বুধবার তিনি বলেন, জামায়াতকে বাইরে রেখেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হচ্ছে। তাই জামায়াতকে টেনে আনা অযৌক্তিক। আর বাকি বিষয়গুলো আগেভাগেই ফয়সালা হয়ে গেছে। বিএনপিও ক্ষমতার ভারসাম্য চায়। তারাও অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।যুগান্তর