মুক্তিযোদ্ধার নাতিই বলে কোটা চাই না, তাহলে দরকার আছে? সব দল নির্বাচনে আসবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা

সব দল নির্বাচনে আসবে

মিথ্যা না লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই * বিশ্ব নেতারা আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চান * জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই * কোটা চাইলে আন্দোলন করতে হবে * সিনহার বিচারে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে * আমি ইভিএমের পক্ষে * কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না * বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি

সব দল নির্বাচনে আসবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী।

কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে, আর কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে না, সেটা ওই দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই হবে, কারণ বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন চায়। বাংলাদেশে এত দল, কোন দল আসবে কোন দল আসবে না, সেটি তাদের দলীয় বিষয়। এটি নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমরা আশা করি সব দল এবার নির্বাচনে আসবে, যদি কেউ না আসে সেটি তাদের একান্ত বিষয়।’

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্ক সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে প্রধান বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলাম। তখন তারা সাড়া দেয়নি। যারা সাড়া দিয়েছিল, তাদের নিয়ে আমরা সরকার গঠন করি। এক প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, আমাদের জোট তো আছে। আর যারা আসতে চায় (সরকারে), আসবে। যেসব দেশে সংসদীয় সরকার আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। সেসব দেশে নির্বাচনের সময়ও সরকারই ক্ষমতায় থাকে। সব দেশের আইনেই তাই আছে। তবে আমরা ক্যাবিনেট ছোট করে নিয়ে করতে পারি।

নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অংশগ্রহণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা কাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না, আগুনে পুড়িয়ে মারে। তাদের জন্য কেন এত মায়াকান্না আপনাদের। দেশের মানুষকে তাদের বিষয়ে জানতে হবে। আপনারা তো সাংবাদিক। কয়জন আগুনে পোড়া মানুষজনের খোঁজখবর নিয়েছেন? নেননি। ৩ হাজার ৯শ’ মানুষকে তারা পোড়াল। খোঁজখবর নিয়ে দেখেন তারা কিভাবে বেঁচে আছে, কিভাবে তাদের জীবন চলছে, কিভাবে তাদের পরিবার চলছে। যারা এ ধরনের নোংরা, জঘন্য কাজ করতে পারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি, এত উদ্বেগ কেন আমার বুঝে আসে না। যারা সামান্য এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না তাদের জন্যই আপনাদের এত উদ্বেগ, কান্না!

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগে নির্বাচন হতো একজন মিলিটারি ডিকটেটর থাকত। আমাদের সময়ে ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বক্স চালু করেছি, আরও বিভিন্ন অগ্রগতি আমাদের সময়ে হয়েছে। আমাদের সময়ে ৬ হাজারেরও বেশি স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে, আমরা তো হস্তক্ষেপ করিনি। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিত কিংবা রেজাল্ট আটকে ভোট বদলে দিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সাংবাদিক ‘মিথ্যা তথ্য’ না দিলে এ আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ প্রকাশ করলে এবং তা প্রমাণ করতে না পারলে সেই সাংবাদিক কিংবা সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে।

‘ওয়ান-ইলেভেন’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় আমার বিরুদ্ধে কত মিথ্যা খবর লেখা হল। পদ্মা সেতু নিয়ে এত মিথ্যা নিউজ হল। যার বিরুদ্ধে লেখা হল, সেটা যদি পরে মিথ্যা হয়, তখন যার বিরুদ্ধে লেখা হল, তার তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়, কিন্তু যারা লেখে তারা তো বহাল তবিয়তে থেকে যায়। নতুন আইনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের বিচারের বিষয়ে বলা ছিল, সেগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন, আমি বুঝলাম। কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে। বা যারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে। আর তাদের কীভাবে কম্পেনসেট করবেন। ওই জায়গায় একটু কমতি আছে। যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। আমরা এটা করার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনগুলো দেখেছি। আইনগুলো দেখা হয়নি, তা নয়। তারপর এটা অনলাইনে ছিল। এটা সবার সঙ্গে আলোচনাও হয়ে গেছে। এরপর এসে হঠাৎ এত উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন কিসের জন্য। আমার কাছে সেটা প্রশ্ন। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে, বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে; তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগে তো সমন জারি করা হতো, সরাসরি গ্রেফতার করা হতো। আমি সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। সম্পাদক পরিষদের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আলোচনায় গিয়েছে, আমি দেখেছি। যারা একটার পর একটা লেখা তৈরি করে আছে, কখন ছাড়বে আমার বিরুদ্ধে। উদ্বিগ্ন হবেন তারা। আপনাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যত দিন আছি। আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

‘কারও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাই না’- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার সমর্থন জনগণ। আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। আমি সেটি নিয়েই থাকতে চাই। এক প্রশ্নের উত্তর তিনি আরও বলেন, এসকে সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) কেন বিএনপি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন আমাকে যেন সমর্থন না দেয়, আমি জানি না।

‘আমি জনসমর্থন নিয়েই থাকতে চাই’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইলে ২০০১ সালে গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে পারতাম। আমাকে সেই প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছি, আমার দেশের জনগণের জন্য যদি ৫০ বছরের গ্যাস থাকে তাহলে বিক্রির চিন্তা করব। তাই বলব, আমার যদি কারও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হয়, সেই ক্ষমতা আমার দরকার নেই। আর কারও আশীর্বাদ নিয়ে ক্ষমতায় আসার চিন্তা আমার কখনও ছিল না, এখনও নেই।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মাইনোরিটি থেকে আমরাই প্রথম তাকে বানিয়েছি প্রধান বিচারপতি। তিনি সেটির সম্মান রাখতে পারেননি। এটি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু তার আপিল ডিভিশনের কয়েকজন সহকর্মী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, তিনি এজলাসে বসলে তারা বসবেন না। সেটি নিয়েই সমস্যা তৈরি। এখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

এসকে সিনহার বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা অপর এক প্রশ্নের উত্তর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স’ (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বেশি বললে বলেন বেশি কথা বলি। আর কম কথা বললে বলেন কম কথা বলি। এ পর্যন্তই থাক।সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা ও বাংলাদেশের ইমেজকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, ৬ দিনের জাতিসংঘ সফরে ১৮টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে আমরা এবার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মানুষের ভোট দেয়ার বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কিন্তু ইভিএমের পক্ষে।’ তিনি বলেন, এখন তো ডিজিটাল যুগ। তাই আমি ইভিএমে কোনো সমস্যা দেখি না। তবে আগে ইভিএম হোক। আমরা এটি কেনার জন্য একনেকে পাস করে দিয়েছি। ইভিএম হোক, এটি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটা জনগণের ভোটের বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে। আমি তো চাই, মোবাইল ফোনেও ভোট ব্যবস্থা চালু হোক।

বিএনপির জন্য এত মায়াকান্না কেন : প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলটি মানুষ পোড়ানোর খেলা খেলল, তাদের জন্য এত মায়া কেন? এত উদ্বেগ কেন? তাদের কাজ তো এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, দেশের টাকা পাচার, দুর্নীতি। খালেদা জিয়া ও তার ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্য অনেকে বসে আছে। তাহলে সেই বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য এত চিন্তা কেন, এত মায়াকান্না কেন?

জোট নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে জাতীয় ঐক্য হওয়ায় খুশি হয়েছি। এতে আমার কোনো ভয় নেই। ভয় তাদের, যাদের হারানোর কিছু থাকে। আমার তো হারানোর কিছু নেই। তিনি বলেন, তাদের জোট সম্প্রসারিত করার জন্য যা যা লাগে আমি সব করতে রাজি। আর জোট হচ্ছে বড় বড় মানুষ নিয়ে। সেখানে কোনো ছোট ছোট মানুষ নেই। এটি নির্বাচনের জন্য ভালো। কিন্তু তারা কেউ নির্বাচনে আসবে কিনা বা কাজ করবে কিনা, সেটি নিয়ে কিছু সন্দেহ আছে। আমি জোট গঠনকে সাধুবাদ জানাব। তারা সভা-সমাবেশ করতে চায়, এটা আমরা অনুমতি দিয়েছি। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেদিন বিএনপি মিটিং করেছে। সেখানে কেউ বলল ৫০, কেউ বলল ৬০ হাজার লোক হয়েছে। আর আমি বলি, এক লাখ। তাও ভালো সেটি তারা করতে পারে।

গণতন্ত্র ফিরে এসেছে- এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ অনেক কষ্ট করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, গণতন্ত্র-উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক। সেটি জনগণই চায়। আর নৌকায় ভোট দিলেই একমাত্র দেশের উন্নয়ন হবে, এছাড়া আর কেউ দেশের উন্নয়নের দিকে নজর দেবে না।

উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে দু’দফা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি চেয়েছি যদি টানা দু’বার থাকতে পারি, তাহলে দেশের জনগণের জন্য উন্নয়নটা দৃশ্যমান হবে। সেটি করতে পেরেছি। এখন আমার কোনো ভয় নেই। কারণ ’৯৬ থেকে ২০০১ সালে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত এসে সেটি নষ্ট করেছে। তাই চেয়েছি যেন দু’দফা টানা ক্ষমতায় থাকতে পারি।

বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি : বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি। কিছু মানুষ সব সময় অপেক্ষা করে, মানুষ ভালো থাকলে যেন তারা ষড়যন্ত্র করতে পারে। এ বাংলাদেশের যে এত উন্নতি, এর সবকিছুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করা হল। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আর দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ কি দিনবদল হয়নি? মানুষ খাবার পাচ্ছে না?

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তারা অপেক্ষা করছে, সরকার চলে যাবে। এমন একজন আসবে, যাদের চাল নেই, চুলো নেই; কিন্তু ক্ষমতায় আসার খায়েশ আছে। তাদের খায়েশ পূরণ করতে গিয়ে তো খেসারত দিতে হয় জনগণকে। ১০ বছর ক্ষমতায় আছি, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। আমাদের তরুণদের জন্য শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। চাকরির জন্য যেন মুখাপেক্ষী না হতে হয়, সেজন্য তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও পত্রিকায় লেখা হয়, সরকার এখানে ফেল করেছে। ওটাই তাদের আত্মসন্তুষ্টি। কিন্তু আমরা নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করি না, মানুষের জন্য কাজ করি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে ভোট দুই ধরনের। একটা ভোট আওয়ামী লীগের, আরেকটা অ্যান্টি আওয়ামী লীগের। বিরোধী জোট বড় হচ্ছে, তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাক। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আমি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেব কেন। তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাক, আমি তা চাই। বিরোধী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকুক। তিনি বলেন, তারা তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকুক। কেউ কেউ বলছে, তাদের সমবেশে ৩ হাজার লোক হচ্ছে, কেউ বলে চার হাজার। আমি বেশি করে ধরেই বলি পাঁচ হাজার। তারা যদি সমাবেশে লোকও চায়, তবে সেটাও সহায়তা করব।

কোটা চাইলে আন্দোলন করতে হবে : কোটা বাতিল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা যদি না থাকে সংস্কারের প্রশ্ন উঠবে না। আর যদি কেউ কোটা চায়, তাহলে কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। আর সে আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখব কী করা যায়। এরপর যদি কেউ কোনো কোটা চায় তাহলে আন্দোলন করতে হবে, বলতে হবে আমি এ কোটা চাই। সেটা আগে বলুক, আন্দোলন করুক। আন্দোলন ছাড়া দেব না।

তিনি বলেন, মেয়েরাও কোটা চায় না, ভালো কথা। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ তো চাকরি পাওয়ার মতো নেই, সবাই তো মারা যাচ্ছেন। যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের সেক্রেটারি মিটিং করলেন। সেখানে অনেকেই বলল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার নাতি কিন্তু আমরা কোটা চাই না। মেয়েরা বলল, আমরা কোটা চাই না, আমরা কমপিটিশন করেই আসব। মেয়েদের মনে যখন এ কনফিডেন্সটা দেখলাম তখন কোটা থাকার দরকারটা কী? মুক্তিযোদ্ধার নাতিই বলে কোটা চাই না, তাহলে দরকার আছে? আর এ কোটা থাকলে খালি আন্দোলন। তো কোটাই নেই, আন্দোলনও নেই, সংস্কারও নেই।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর এ কোটা দেয়া হল। যারা মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত নারীদের জন্য বা যারা অনগ্রসর তাদের জন্য জাতির পিতা এটা করে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরাও ছাত্র রাজনীতি করেছি, আন্দোলন করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসির বাড়িতে ভাংচুর হল। রাত একটা-দেড়টার সময় সুফিয়া কামাল হলের গেট ভেঙে ছাত্রীরা বের হয়ে চলে এলো, শামসুন্নাহার হল থেকে বের হয়ে এলো। একটা মেয়ের যদি ক্ষতি হতো এ দায়িত্ব কে নিত। সারা রাত আমি জেগে ছিলাম।

হেফাজতে ইসলাম কখনও আমাদের শত্রু ছিল না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম কখনও আমাদের শত্রু ছিল না। কওমি মাদ্রাসার মান দিয়ে তাদের উপকার করেছি। তাই তারা দোয়া করছে। তারা যদি আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও সমস্যা নেই বলে থাকে, তাহলে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিশ্ব নেতারা আবারও আমাকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান : প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবাই আগামীতে আবারও আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে ১৮টি ইভেন্টে আলোচনা ও ১১ জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। তারা দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো পরামর্শ দেননি; আলোচনাও হয়নি। তবে সবাই আমাকে উইস করেছে; আবারও যেন আমরা ক্ষমতায় আসি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবারও তাদের সঙ্গে যেন দেখা হয়। আমি কিন্তু বলিনি, আপনারা আসেন আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে যান। বলেছি, দেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, তাহলে আছি, না দিলে নাই।অপর এক প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রায় ১০ বছরের মতো ক্ষমতায় আছি। এমন কোনো অন্যায় কাজ করিনি যে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। ২০০৮ সালে বন্দিশালায় থাকাকালীন দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। এটি এখন বাস্তবায়ন করছি। উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ এখন শান্তিতে আছে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান : রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেখানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে কথা হয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেছি।’

——0——-

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ তো চাকরি পাওয়ার মতো নেই, সবাই তো মারা যাচ্ছেন। যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের সেক্রেটারি মিটিং করলেন। সেখানে অনেকেই বলল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার নাতি কিন্তু আমরা কোটা চাই না। মেয়েরা বলল, আমরা কোটা চাই না, আমরা কমপিটিশন করেই আসব। মেয়েদের মনে যখন এ কনফিডেন্সটা দেখলাম তখন কোটা থাকার দরকারটা কী? মুক্তিযোদ্ধার নাতিই বলে কোটা চাই না, তাহলে দরকার আছে? আর এ কোটা থাকলে খালি আন্দোলন। তো কোটাই নেই, আন্দোলনও নেই, সংস্কারও নেই।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিউইয়র্কে তার সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। লিখিত বক্তব্যের পর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা যদি না থাকে সংস্কারের প্রশ্ন উঠবে না। আর যদি কেউ কোটা চায়, তাহলে কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। আর সে আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখব কী করা যায়। এরপর যদি কেউ কোনো কোটা চায় তাহলে আন্দোলন করতে হবে, বলতে হবে আমি এই কোটা চাই। সেটা আগে বলুক, আন্দোলন করুক। আন্দোলন ছাড়া দেব না।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর এই কোটা দেয়া হল। যারা মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত নারীদের জন্য বা যারা অনগ্রসর তাদের জন্য জাতির পিতা এটা করে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আমরাও ছাত্র রাজনীতি করেছি, আন্দোলন করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিসির বাড়িতে ভাংচুর হল। রাত ১টা-দেড়টার সময় সুফিয়া কামাল হলের গেট ভেঙে ছাত্রীরা বের হয়ে চলে এলো, শামসুন্নাহার হল থেকে বের হয়ে এলো। একটা মেয়ের যদি ক্ষতি হতো এ দায়িত্ব কে নিত। সারারাত আমি জাগা ছিলাম।

বিরোধী জোটকে সাধুবাদ

আরেক প্রশ্নের জবাবের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ভোট দুই ধরনের। একটা ভোট আওয়ামী লীগের, আরেকটা এন্টি আওয়ামী লীগের। বিরোধী জোট বড় হচ্ছে, তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাক। আমি তাদের সাধুবাদ জানাই। আমি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেব কেন। তারা সুষ্ঠু রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাক, আমি তা চাই। বিরোধী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এভাবে চলতে থাকুক।

মাদ্রাসা দিয়ে উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এই উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছিল মাদ্রাসা দিয়ে। হিন্দু ধর্মের জন্য (শিক্ষা শুরু) যেমন টোল (আদি শিক্ষা) থেকে; (তেমনই)আমাদের মুসলমানদের তেমন মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে। তাই এটাকে আমরা সম্পূর্ণ বাতিল করতে পারি না। কারণ, ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছেলেমেয়ে প্রতি বছর পড়াশোনা করে যাচ্ছে।

‘তারা কী পড়ছে, কোথায় যাচ্ছে, কী করছে-তাদের কোনো ঠিকানা নাই। তাদেরকে একটা সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার বা সম্মান দেয়ার তাদের জীবন-জীবিকার পথটা সৃষ্টি করে দেয়া কি আমাদের কর্তব্য না?’-প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী

কেউ ধর্মীয় অনুভূতির বাইরে না

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই অনেক কিছু মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, আমরা কেউ ধর্মীয় অনুভূতির বাইরে না। আমরা ধর্মকে অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু ধর্মকে অপব্যবহার হউক সেটাও আমরা চাই না। ধর্ম শিক্ষাটা আমাদের শিক্ষাটা পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা তখনই যখন আমরা জীবন-জীবিকার শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাটা গ্রহণ করতে পারি সে শিক্ষাটাই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয়।

‘আপনার এক সময়ের শত্রু আল্লামা শফী এখন আপনাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে-এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত কী?’- একটি পত্রিকার সম্পাদকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কোনো (হেফাজতের সঙ্গে) শত্রুতা ছিল না, এটা ভুল। কে শত্রু কে মিত্র তা দেখিনি।

এরকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে

৫ মের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চেয়েছি যে, এরকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে। এবং বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা দরকার। তখনকার ওই অঞ্চলের সবাই ভয়ভীতির মধ্যে ছিল। এমন অবস্থা ছিল যে, তারা যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটাতে পারে। খালেদা জিয়া তো ওপেনলি তাদের সমর্থন দিয়ে দিল। জামায়াত তাদেরকে সমর্থন দিয়ে দিল।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘তাদের বলা হয়েছিল, ২০০ গরু জবাই করে খাওয়াবে। কিন্তু তাদেরকে খাওয়াই নাই, তারা মাদ্রাসার বাচ্চা বাচ্চা (ছেলেদের) নিয়ে আসছিল। তাদের ভাগ্যে একটা রুটি কলা ছাড়া কিছুই জুটেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবেই হোক, আমি যেভাবেই পারি আমি তো টেনশন মুক্ত করেছি। কেউ তো আর সাধুবাদ দেবে না।

হেফাজতকে প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ

হেফাজতের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় তারা মনে করতো আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না, এখন যদি তারা প্রশংসা করে তাহলে আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সবার মনেই একটা স্বস্তি এসেছে যে, এখন আর (শাপলা চত্বরের মতো) ওই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। আমি চেয়েছি এরকম পরিস্থিতি যেন আর না হয়, সেটা হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে বলব, এখানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েরা পড়ে। আমাদের দেশে অনেক গরিব সন্তান, অনেক এতিম সন্তানরা সেখানে ঠাঁই পায়। কিন্তু তাদের আসলে কোনো স্বীকৃতিও ছিল না-তারা নিজেদের মতো নিজেরাই করতো।’

কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতিতে সারা দেশের মানুষ খুশি

তিনি বলেন,আমি চেষ্টা করে গেছি-এটার একটা সমাধান করতে। আজকে সেটা করে (কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি) দিয়েছি তাদের জন্য। কেউ যদি এখন আমার জন্য দোয়া করে বা কেউ যদি ভালো বলে তাহলে তো দেশের মানুষের খুশি হওয়া কথা। আর যারা আমার সত্যিকার ভালো চায় না, যারা আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে, তারা হয়তো মনে কষ্ট পাবে, অখুশি হবে। কিন্তু সারা বাংলাদেশের মানুষ (কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির কারণে) খুশি হয়েছে। এখন আমার অনুভূতি এতটুকুই যারা শিক্ষা গ্রহণ করতো তাদের যে একটা ভবিষ্যতের ঠিকানা করে দিতে পেরেছি সেটাই আমার বড় সেটিসফেকশন (তৃপ্তি)।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।